অবশেষে মারা গেল হীরা

রিপন দে
রিপন দে রিপন দে মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৯

অবশেষে মাত্র তিন বছর বয়সেই মারা গেল সিংহ হীরা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় মারা যায় হীরা। তবে কবে কখন হীরা মারা গেছে তা নিশ্চিত করেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে হীরা। জন্মের পর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিল। দুই বছর বয়সে শক্তি আর ক্ষিপ্রতায় পরিপূর্ণ হয়ে আফ্রিকান সিংহ হিসেবে হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করে। এমনকি ২০১৮ সালের শুরুতে সাফারি পার্কের একটি শক্ত লোহার গেট ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু শক্তশালী সেই হীরাকে সাফারি পার্ক থেকে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায় আনার প্রায় এক বছরের ভেতরে শক্তি, ক্ষিপ্রতা আর জৌলুস হারিয়ে মারা যায়।

এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এসএম নাজমুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার মারা গেছে সিংহ হীরা। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত হয়েছে সিংহ হীরার।

যেখানে একটি সিংহের গড় আয়ু প্রায় ২০ বছর, সেখানে কীভাবে জন্মের তিন বছরেই মৃত্যু হয়েছে হীরার এজন্য প্রাণীপ্রেমীরা চিড়িয়াখানার অবহেলাকে দায়ী করলেও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে হীরার জন্মগত ত্রুটি ছিল।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাবেক প্রকল্প পরিচালক সফিউল আজম জানিয়েছেন, জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেয়ার সময় সিংহটি সুস্থ ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে হীরা। ২০১৮ সালের ২ মে সাফারি পার্ক থেকে হীরা নামের সিংহটিসহ মোট চারটি সিংহ ও দুটি ভাল্লুক চিড়িয়াখানায় দেয়া হয়। সিংহটি তখন পুরোপুরি সুস্থ ছিল। এমনকি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসার ৩-৪ দিন আগে সিংহটি সাফারি পার্কের একটি গেট ভাঙার চেষ্টা করে পায়ে ব্যথা পায়। যখন ওই ছয়টি প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় আনা হয় তখন চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সব পরীক্ষা করে দেয়।

কিন্তু চিড়িয়াখানায় আসার পর থেকেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন মৃত্যুর পথের যাত্রী হয়েছে হীরা। এমনকি তার গায়ে মাছি ভনভন করা অবস্থায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তার প্রদর্শন অব্যাহত রাখে। পরে অসুস্থ হীরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে সিংহের খাঁচাকে দর্শনার্থীদের থেকে আড়াল করে রাখা হয়। এ অবস্থায় মারা যায় সিংহ হীরা। তার পেটে দুটি টিউমার ধরা পড়েছে।

গত ২৪ জুন জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এসএম নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হীরা আফ্রিকান সিংহ। কিন্তু যে সিংহটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেটা ইন্ডিয়ান সিংহ। আমাদের চিড়িয়াখানার সিংহটি জন্ম থেকে অসুস্থ ছিল। আড়াই মাস ধরে সে এতটাই অসুস্থ যে স্বাভাবিক খাবার মুখে নেয় না। তার চিকিৎসার জন্য আমরা দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি এবং প্রতিদিন মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়ে আপডেট দিচ্ছি।

তবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাবেক প্রকল্প পরিচালক সফিউল আজম বলেছেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সিংহটি নেয়ার সময় দেখেশুনে নিয়েছে। অসুস্থ প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় দেব কেন আমরা?

এদিকে হীরার মৃত্যুর জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন প্রাণীপ্রেমীরা। পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু বারবার চিড়িয়াখানার খাবার নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠছে তাই আমাদের প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। তার ওপর এটা মানতে হবে এখানে দায়িত্বশীলদের চরম অবহেলা ছিল। এর আগেও আমরা কুমিল্লায় একই ঘটনা দেখেছি।

এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।