মেয়ের পুলিশে চাকরি হওয়ায় এসপির প্রতি কৃতজ্ঞ বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৯
পপিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি খলিলুর রহমান

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ জম্বদ্বীপ গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক ইয়ার হোসেন। তিনি স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবেননি তার মেয়ে পপি খানমের বিনা টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হবে। তাও আবার বানারীপাড়া উপজেলায় একমাত্র নারী কনস্টেবল হিসেবে। তবে বাস্তবে ১০৩ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে পপি খানমের। মেয়ে পুলিশে চাকরি পাওয়ায় আনন্দে ভাসছে কৃষক ইয়ার হোসেনের পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ নাজিরপুর গ্রামে আদি বাড়ি ছিল শেখ ইয়ার হোসেনের। প্রায় ২০ বছর আগে বসতভিটা সন্ধ্যা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামে অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করেন। সংসার চালাতে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ শুরু করেন ইয়ার হোসেন। শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। শেখ ইয়ার হোসেন এক ছেলে সন্তানের আশায় একে একে সাত কন্যা সন্তানের বাবা হন। কৃষিকাজ করে সাত কন্যা সন্তানের লেখাপড়াসহ ৯ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন ইয়ার হোসেন। তার একার উপার্জনে সংসারের চাকা যেন ঘুরতে চায় না। প্রায় দিনই অনাহারে কাটতো তাদের। বেশিরভাগ সময় ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ডের চালে চলে তার সংসার। তবে এত কষ্টের মধ্যেও মেয়েদের লেখা-পড়া বন্ধ হতে দেননি।

সাত মেয়েই কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। তাদের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের জন্য ইয়ার হোসেনকে আত্মীয়-স্বজন কিংবা শুভাকাঙ্খীদের কাছে প্রায়ই হাত পাততে হয়। ইয়ার হোসেনের অভাবের সংসারে একটি চাকরির খুবই প্রয়োজন ছিল।

বাবা শেখ ইয়ার হোসেন বলেন, তার একার সামান্য আয় দিয়ে ৯ জনের সংসার আর চলছিল না। কিছু দিন আগে মেজ মেয়ে বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত পপি খানম জানায় পুলিশে লোক নেবে। তখন আমি অমত করেনি। তবে চাকরি পেতে শুনেছি লাখ লাখ টাকা লাগে। কোথায় পাব এত টাকা। তাই মেয়ের পুলিশে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি স্বপ্নই ছিল। স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবিনি ১০০ টাকার ট্রেজারি চালান ও তিন টাকার ফরমে মোট ১০৩ টাকা খরচ করে আবেদন করে মেয়ে চাকরি পাবে।

তিনি আরও বলেন, অভাব-অনটনের টানাটানির সংসারে মেয়েদের ভালো জামা কিনে দিতে পারিনি। ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন প্রাইভেট পড়ে, তেমন সুযোগ হয়নি পপির। সেই সক্ষমতাও ছিল না আমার পরিবারের। পড়াশোনার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করেছে পপি।

শেখ ইয়ার হোসেন বলেন, পপি চাকরি পাওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। টাকার বিনিময় নয়, শুধু মেধা ও যোগ্যতার বিচারে মেয়ে চাকরি পাওয়ায় সরকার ও পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

পুলিশে সদ্য চাকরি পাওয়া পপি খানম বলেন, সংসার চালাতে বাবাকে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হচ্ছে। তারপরও আমাদের সাত বোনের পড়া-লেখা বন্ধ হতে দেননি। একটি চাকরির খুবই প্রয়োজন ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে চাকরি হয়ে গেছে। এখন বাবার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে চাই। অন্য বোনদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই।

সাইফ আমীন/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।