কনস্টেবল নিয়োগে ২৩ লাখ টাকা ঘুষ, জড়িত এএসপি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:২২ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৯

কুড়িগ্রামে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে ২৩ লাখ টাকা ঘুষ আদান-প্রদান হয়েছে। ঘুষের মাধ্যমে এ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদককে খাগড়াছড়ি ও এসআই আবু তালেবকে বরিশালে বদলি করা হয়েছে।

একই সঙ্গে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক আব্দুল মান্নান ও উচ্চমান সহকারী ছকমল এবং রংপুর ডিএসবির এএসআই রুহুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের চালক সাইদুর রহমান সায়েম ও রেশন স্টোরের ওজনদার আনিছুর রহমানকে ডিআইজি অফিসে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে, কনস্টেবল নিয়োগে ২৩ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের খবর পেয়ে কুড়িগ্রামে পুলিশ সুপারের উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ ঘুষের টাকা উদ্ধার করে চাকরিপ্রার্থীদের ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘুষের মাধ্যমে চাকরিপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল করে ৩৩ জনকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।

নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৩ জন পুলিশ সদস্যের নামের তালিকা সাংবাদিকদের দিয়ে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, এখনো কারও বিরুদ্ধে যদি ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় তার নিয়োগ বাতিল করা হবে। এর সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেনহাজুল আলম, সদর থানা পুলিশের ওসি মাহফুজার রহমান ও ডিএসবি ওসি শাহ-আলম প্রমুখ।

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন মাঠে জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ২৯ জুন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। লিখিত, মৌখিক এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চূড়ান্ত নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচিতদের ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে মিষ্টিমুখ করান পুলিশ সুপার।

কনস্টেবল নিয়োগে ২৩ লাখ টাকা ঘুষ, নেপথ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

এর আগে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান কুড়িগ্রামে যোগদানের পর পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে জনগণকে কোনোরকম প্রতারণার ফাঁদে পা না দিতে সতর্ক করে দেন। এরই মধ্যে পুলিশের কিছু সদস্য আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন। একটি চক্র পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করেন। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে শনাক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

নিয়োগ বাণিজ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদককে খাগড়াছড়ি ও এসআই আবু তালেবকে বরিশালে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘুষের ২৩ লাখ উদ্ধার করে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক আব্দুল মান্নান ও উচ্চমান সহকারী ছকমলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ড্রাইভার সাইদুর রহমান সায়েম ও রেশন স্টোরের ওজনদার আনিছুর রহমানকে ডিআইজি অফিসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রংপুর ডিএসবি শাখার এএসআই রুহুলকে ১০ লাখ টাকাসহ কুড়িগ্রামে আটক করা হয়। পরে রংপুর এসপির হাতে তাকে হস্তান্তর করা হলে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারই পুলিশের নিয়োগকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এবাও পুলিশের সদস্য, বহিরাগত দালাল, রাজনৈতিক নেতা ও প্রতারকরা এ নিয়োগে মোটা অংকের টাকা পকেট করেন।

তদন্তে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে কারা কারা জমি বিক্রয় করেছেন তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর প্রমাণ পাওয়ায় কয়েকজনকে বাদ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে দালালদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার করে প্রার্থীদের ফেরত দেয়া হয়।

নাজমুল/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।