সন্তানের জন্য ৪৪ বছর ধরে রোজা রাখা সেই মা আর নেই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০১:৫৬ এএম, ০৯ জুলাই ২০১৯

সন্তানের জন্য দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে রোজা রাখা সেই মা ভেজিরন নেছা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সোমবার (৮ জুলাই) বার্ধক্যজনিত কারণে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর নিজ বাড়িতে আনুমানিক বিকেল পাঁচটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ৩ ছেলে মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের বিধান মতে বছরে কয়েকটি রোজা ছাড়া দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর রোজা রেখেছেন। বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যাবার পর, খোঁজার প্রায় দেড়মাস পর তিনি নিয়ত করেন ছেলেকে ফিরে পেলে, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই রোজা রাখবেন। সেই থেকে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রোজা রেখে গেছেন।

গ্রামবাসী জানান, ১৯৭৫ সাল তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলামে বয়স ১১ বছর হবে। সে একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েও পাওয়া যায়নি। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ এবং দরগায় ১৩-১৪টি স্থানে খাবারের আয়োজ করা হয়। তখন মানুষের খুব অভাব চলছিল, ধারণা করা হচ্ছিল হয়তো কোনো জায়গায় খাবার না পেয়ে মসজিদ বা দরগায় খানা খেতে আসবে। তবুও আসেনি তিনি।

southeast

এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন তাকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিল। পরিবারের লোকজন ছাড়াই সখিরন নেছা একা একা ছেলেকে খুঁজে বেড়াতেন। প্রায় দেড়মাস পর, রমজান মাস আসলে, রোজা থাকা অবস্থায় একদিন সন্ধ্যার আগে গ্রামের কাজীপাড়া জামে মসজিদের কাছে ছেলেকে খুঁজতে গেলেন। না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসছিলেন। মসজিদের কাছে আসতেই, মসজিদে হাত দিয়ে পণ করেন ছেলেকে ফিরে পেলে যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন রোজা রাখবেন। মা ফিরে এসে দেখতে পাই ছেলে শহিদ বাড়িতে এসেছে। সেই থেকে তিনি দীর্ঘদিন রোজা রেখেছেন।

বাজার গোপালপুর গ্রামের মাসুম শেখ জানান, আমার বুদ্ধি-জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখছি ভেজিরন নেছা ওরফে ভোজা (বুবু) রোজা রাখছেন। শত অভাব অনটনের মধ্যে, পরের বাড়িতে কাজকর্ম করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেছে। দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর মুসলমান ধর্মের বিধান মেনে, বড় ছেলে শহিদুল হারিয়ে যাবার পর ফিরে পেয়ে রোজা রেখেছেন।

তিনি বলেন, মা তো মা-ই। মায়ের তো কারো সাথে তুলনা হয় না। তবে ছেলের জন্য যে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা একমাত্র মা বলেই সম্ভব হচ্ছে। তার মতো আর মা আছে বলে আমার জানা নেই।

ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক মা’ই তার সন্তানদের ভালোবাসেন। তবে আমার মা আমার জন্য সারা জীবন রোজা রাখবেন বলে যে সিন্ধান্ত নিয়ে রোজা পালন করেছেন। পৃথিবীতে এমন মা আছে বলে আমার জানা নেই। এমন মা পাওয়া সত্যিই গর্বের বিষয়। তিনি তার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।