বন্ধ হচ্ছে লাউয়াছড়ার ভেতরের সড়কপথ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ০৮ জুলাই ২০১৯

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সড়ক পথ সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকা থেকে কমলগঞ্জের বটতলা পর্যন্ত একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব বলে জরিপে নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বিকল্প সড়ক চালুর বিষয়ে এ যৌথ জরিপ পরিচালনা করে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা রেললাইন ও সড়ক পথ সরানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। অবশেষে সে দাবি মেনে লাউয়াছড়ার ভেতরের সড়ক পথ সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকা থেকে কমলগঞ্জের বটতলা পর্যন্ত একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব বলে জরিপে নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রাণীবৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক। রেল ও সড়কপথের দু’পাশেই উদ্যান। বন্য প্রাণীরা সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। এক্ষেত্রে রাতের বেলাতেই বন্য প্রাণীর বিচরণ বেশি। রাস্তা পারাপারের সময় হঠাৎ সামনে চলে আসা দ্রুতগামী যানবাহনের আলোতে প্রাণীরা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন দ্রুতগামী গাড়ির আঘাতে অনেক বন্য প্রাণী মারা পড়ছে। প্রায়ই পথচারীরা সড়কের ওপর ও পাশে বন্য প্রাণীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখছেন।

Lawachara-2

এই রাস্তা যখন তৈরি হয়, সে সময় যানবাহন কম ছিল। এখন প্রতিদিন এই সড়কে ২০০ থেকে ৩০০ যানবাহন চলাচল করে। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো বিরল প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে সড়কে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-সিলেট রেললাইন এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে প্রতিবছর অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি বিভিন্ন বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণী মারা পড়ছে।

বন বিভাগ ও সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং সওজ শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের বিকল্প হিসেবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বাইরে দিয়ে যেসব সড়ক গেছে, সেই সড়কগুলোর ওপর একটি প্রাথমিক জরিপ চালানো হয়েছে। এই জরিপ দলটি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্র্যান্ড সুলতান টি-রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের সামনে থেকে রাধানগর হয়ে যে রাস্তা গেছে সেই রাস্তাটিকে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের কমলগঞ্জ উপজেলার বটতলা নামক স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছে। এতে রাস্তার দূরত্ব ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মতো হতে পারে। বিকল্প হিসেবে এই রাস্তা করা হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পুরোপুরি সড়কপথ থেকে আলাদা হয়ে যাবে।

তখন উদ্যানের ভেতরের সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া উদ্যান এলাকা থেকে নূরজাহান চা-বাগান হয়ে যে সড়কটি গেছে সেটিও বন্ধ করা হবে। ফলে যানবাহনের চাপায় বন্য প্রাণী মৃত্যুর আশঙ্কা থাকবে না।

Lawachara-2

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আনিসুর রহমান বলেন, সওজ ও আমরা যৌথ সার্ভে করেছি। অনেক রাস্তা ঘুরে দেখেছি। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে, রাধানগর হয়ে যে রাস্তাটি গেছে সেটি গিয়ে কমলগঞ্জের বটতলায় উঠবে। এতে লাউয়াছড়া পুরোপুরি আলাদা হয়ে যাবে। বন্য প্রাণীর আর সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, লাউয়াছড়া বন্য প্রাণীতে ভরপুর। এত প্রাণী আর কোথাও নেই। বিকল্প রাস্তা হওয়াটা দরকার। সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকা-সিলেট রেল লাইন না সরানো পর্যন্ত রেল লাইনের দু’পাশে বেড়া দেয়া হবে, যাতে বন্য প্রাণী রেললাইনে উঠতে না পারে। তাদের নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

সওজ মৌলভীবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে রাধানগর হয়ে বটতলা পর্যন্ত বিকল্প সড়ক নির্মাণ করার। এতে হয়তো একটু ঘোরা লাগবে। তবে এখনকার চেয়ে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ লাউয়াছড়া বনটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এখানে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রকারের উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।

রিপন দে/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।