‘পথের কাঁটা’ হয়ে ওঠায় ইউপি সদস্য শওকতকে খুন
নিজ দলীয় নেতার পরিকল্পনাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শওকত ওরফে জসিম খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। মূলত দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, শওকত ‘পথের কাঁটা’ হয়ে ওঠায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন মুর্শেদ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. শওকত ওরফে জসিমের সঙ্গে তার প্রতিবেশী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন মুর্শেদের বিরোধ চলে আসছিল। শওকত ওই ইউনিয়নের যমুনা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। তিনি ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এলাকায় জনপ্রিয়তায় বিপুল অর্থবিত্তের মালিক মুর্শেদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন শওকত।
বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শওকত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মুর্শেদের সঙ্গে বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে। সেই থেকেই মুর্শেদের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে ‘পথের কাঁটা’ হয়ে ওঠেন শওকত।
গত শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুরে কে বা কারা শওকতকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে আটটার দিকে শওকতকে খাবার খাওয়ার জন্য ফোন করা হলে তিনি বাড়িতে আসছেন বলে জানান। এরপর খবর আসে শওকতকে মেরে যমুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় শওকতকে উদ্ধার করে প্রথমে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
এরপর অবস্থার অবনতি হলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। শওকত মৃত্যুর আগে হাসপাতালে মুর্শেদসহ কয়েকজনের নাম বলে গেছেন। তারাই তাকে মেরেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। শওকতের জবানবন্দিমূলক একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহত শওকতের স্ত্রী মোছাম্মৎ শিউলি আক্তার জানান, টাকা দিয়ে আমার স্বামীকে কিনতে চেয়েছিল মুর্শেদ। কিন্তু আমার স্বামী টাকার কাছে বিক্রি হয়নি। মুর্শেদের কথা মতো না চলার কারণে সে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অনেক মামলাও দিয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই না পেরে হত্যার পরিকল্পনা করে মুর্শেদ।
শওকতের মেয়ে জিদনী আক্তার জানান, ওয়াসিম নামে গ্রামের একজন লোক আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমার বাবাকে দীর্ঘদিন থেকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল মুর্শেদ। গরুর হাড় যেভাবে টুকরো টুকরো করা হয় সেভাবে আমার বাবার পায়ের হাড় টুকরো করেছে হত্যাকারীরা। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম মিয়া জানান, আধিপত্য নিয়েই শওকতকে হত্যার পরিকল্পনা করে মুর্শেদ। অনেক টাকা-পয়সার কারণে মুর্শেদের প্রভাবের কাছে আমি নিজেও অসহায়।
হত্যার অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মেহারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন মুর্শেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখনও কিছু জানি না। তদন্ত সাপেক্ষে মুর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (কসবা সার্কেল) আবদুল করিম জাগো নিউজকে জানান, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/জেআইএম