কুমিল্লায় অপহরণ : টেকনাফে মুক্তিপণ আদায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:২৩ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে অপহরণ। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় টেকনাফে। এরপরে অপহৃত দুই শিশু উদ্ধারের গল্পেও রয়েছে অনেক চমক। শ্বাসরুদ্ধকর অনেক নাটকীয়তায় অনেকটা সিনেমা স্টাইলে অপহরণের ৩ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে একটি মাদ্রাসার দুই শিশু ছাত্রকে।

এ ঘটনায় পুলিশ মুক্তিপণের টাকা গ্রহণকালে অপরণকারী চক্রের মো. তোয়া নামের এক রোহিঙ্গা সদস্যকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকা থেকে আটক করে বুধবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর বেড়িয়ে এসেছে বাঙালি-রোহিঙ্গা মিলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

কুমিল্লার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক ওই রোহিঙ্গা সদস্যকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টায় সদর দক্ষিণ থানার ওসি প্রশান্ত পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।   

সদর দক্ষিণ থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ উপজেলার ভশ্চি জামিরা নূরানী মাদরাসার দুই শিশুছাত্র বরুড়া উপজেলার নয়নতলা গ্রামের মৃত আবদুল মোতালেবের ছেলে লোকমান (১০) ও সদর দক্ষিণ থানার পরানপুর গ্রামের ক্বারী তাজুল ইসলামের ছেলে এমরান (১২) মাদরাসার সামনে থেকে অপহৃত হয়। পর দিন ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে অপহরণকারী চক্র এমরানের মায়ের মোবাইল ফোনে ৩০ হাজার টাকার মুক্তিপণ দাবি করে। নতুবা এই দুই শিশুকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়। ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে ওই নম্বর থেকে অপহরণকারীরা আবারো ফোন করে টাকা চাইলে দরিদ্র লোকমানের পরিবার ৩ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে এবং বাকি টাকা পরে দেবে জানালে অপহরণকারীরা টাকা পাঠানোর জন্য একটি বিকাশ নম্বর দেয়। বিষয়টি লোকমানের পরিবার সদর দক্ষিণ থানা পুলিশকে জানায় এবং থানায় একটি জিডি করে।

যেভাবে উদ্ধার হলো ২ শিশু

পরিবারের জিডি এবং বিকাশের নম্বরের সূত্র ধরে অভিযান শুরু করে সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশ। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়ার সহযোগিতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর দক্ষিণ থানার ওসি মো. আইয়ুব প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরণকারী চক্রের দেয়া বিকাশ নম্বরটির অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফ থানার নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প এলাকার বলে নিশ্চিত হন।

পরে কুমিল্লা পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত টেকনাফ থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে টেকনাফ পুলিশ সংশ্লিষ্ট বিকাশ নাম্বারের দোকানের পাশে ওঁৎ পেতে থাকে। এসময় লোকমানের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই বিকাশ নম্বরে অপহরণকারীদের কথামতো ৩ হাজার টাকা পাঠানো হয়।

নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আজিমুদ্দিনের ছেলে মো. তোয়া (২৫) ওইদিন (সোমবার) সন্ধ্যায় ওই বিকাশের দোকানে টাকা ওঠাতে গেলে পুলিশ তাকে টাকাসহ আটক করে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সদর দক্ষিণ থানার ওসি (তদন্ত) মো. আইয়ুবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সোমবার রাতেই টেকনাফ থানায় যায় এবং মঙ্গলবার আটক রোহিঙ্গা তোয়াকে নিয়ে কুমিল্লায় ফিরে আসে।

এদিকে অপহরণকারী চক্রের তোয়া আটকের খবর পেয়ে অপহরণকারীরা ওই ২ শিশু ছাত্রকে পরদিন বুধবার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা বাজারের মসজিদের সামনে ছেড়ে দেয়। খবর পেয়ে সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ শিশু দুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

উদ্ধার দুই শিশু পুলিশকে জানায়, অপহরণের পর তাদেরকে একটি কাভার্ড ভ্যানে উঠিয়ে দিন-রাত বিভিন্ন স্থানে ঘোরানো হয়।

পুলিশ জানায়, অপহরণচক্রের রোহিঙ্গা তোয়াকে বুধবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ডাকাত সালাউদ্দিন ও মনো খলিফার নাম প্রকাশ করে এবং কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণ কাজে তাদের আরো সদস্য জড়িত রয়েছে বলে জানায়।

এছাড়া ওই দুই শিশুছাত্র অপহরণের সাথে স্থানীয় চক্র জড়িত রয়েছে। এসব অপহরণকারীরা অপহরণের পর লোকজনকে জিম্মি করে ওই চক্রের রোহিঙ্গা সদস্যদের দ্বারা বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা আদায় করে।

সদর দক্ষিণ থানার ওসি (তদন্ত) মো. আইয়ুব জানান, আটক রোহিঙ্গা তোয়া প্রাথমিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের অপর সদস্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ থানার ওসি প্রশান্ত পাল জানান, ‘আটক রোহিঙ্গা সদস্য তোয়া বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে অপহরণ ও এ চক্রের সাথে জড়িতদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছে, পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন বিজ্ঞ আদালত।’

কামাল উদ্দিন/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।