ছেলের থাপ্পড়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন বৃদ্ধা মা
‘ছোট পুত্রবধূ ইনসানা আমার বুকে তিনটি ঘুষি মেরেছে। ছেলে থাপ্পড় দিয়েছে। ছোট ছেলে ফারুক, তার স্ত্রী ইনসানা আর তাদের ছেলে হৃদয় আমার ওপর খুব নির্যাতন করেছে। আমাকে মারধর করেছে তারা। কয়েক দিন আগে ফারুক আমাকে চড় মেরেছিল।’
এভাবে কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা হাফেজা খাতুন। কান্নারত বৃদ্ধা হাফেজা বলেন, পুত্রবধূ ইনসানা আমার টয়লেটে যাওয়ার পানির বদনায় মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে রেখেছিল। তারা কেন এমন করে আমি জানি না। তাদের অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারছি না। আল্লাহ তাদের বিচার করুক।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা হাফিজা খাতুন আরও বলেন, ১০-১২ দিন আগে নাতি হৃদয় আমার ঘরের বারান্দার চালা ভেঙে দেয়। এ সময় একটা বড় বাঁশ ভেঙে আমার মাথায় পড়ে। আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না। ওষুধ এনে দেয়ার কথা বললে ফারুক বলে থানায় যাও, তারা ওষুধ দেবে।
স্থানীয়রা জানান, স্বামীর ভিটাবাড়ি ছেড়ে অন্য ছেলের বাড়ি না যাওয়ায় বৃদ্ধা মা হাফেজা খাতুনকে তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), ফারুকের স্ত্রী ইনসানা (৩২) এবং নাতি হৃদয় (২১) মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনয়িনের গলেহা ফুলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিকেলে বৃদ্ধার মেজো ছেলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ফারুকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে স্বামী হারান বৃদ্ধা হাফেজা খাতুন। স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে ভিটাবাড়িতে একাই থাকেন তিনি। একই বাড়িতে ছোট ছেলে পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও বৃদ্ধা মা প্রতিদিনের খাবার খেতেন পাশের আরেক ছেলের বাড়িতে।
পাঁচ ছেলে এবং পাঁচ মেয়ের জননী হাফেজা খাতুন সবার বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ছেলে এবং মেয়েরা মাকে তাদের বাড়ি নিতে চাইলেও স্বামীর ভিটা ছেড়ে যেতে রাজি হননি। ছোট ছেলে ফারুক হোসেনের ঘরঘেঁষে স্বামীর ভিটায় ঝুপড়ি ঘর করে একাই থাকেন হাফেজা। খাওয়া-দাওয়া করেন মেজো ছেলে শফিউল্লাহর বাড়িতে। তবে ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী ঝুপড়ি ঘরটি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধা মাকে মারপিটসহ নানাভাবে নির্যাতন করছেন।
শনিবার দুপুরে বৃদ্ধার টয়লেট যাওয়ার রাস্তায় আবর্জনা জড়ো করে রেখে দেন ফারুকের স্ত্রী ইনসানা বেগম। বৃদ্ধা কষ্ট করে ওই আবর্জনা সরিয়ে নেন। এ নিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে রাগ করেন পুত্রবধূ। পরে টয়লেটে যাওয়ার সময় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধার হাত থেকে পানিভর্তি বদনা নিয়ে ভেঙে ফেলেন পুত্রবধূ ইনসানা। একপর্যায়ে ছেলে ফারুকের উপস্থিতিে স্ত্রী ইনসানা বৃদ্ধার বুকে ঘুষি মারেন। এ সময় বৃদ্ধার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ছেলে শফিউল্লাহ মাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বৃদ্ধার মেজো ছেলে শফিউল্লাহ বলেন, বাবার ভিটেতে ছোট্ট একটি ঘরে থাকেন বৃদ্ধা মা। তিনি সেখান থেকে আসতে চান না। আমার বাড়িতে তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া করেন মা। এটা ফারুকের সহ্য হয়নি। মায়ের ঘর দখলে নিতে মাকে মারপিট ও নির্যাতন করছে ফারুক ও তার স্ত্রী। আমরা তাদের সঙ্গে ঝগড়া না করে আইনের আশ্রয় নিতে এসেছি।
এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছোট ছেলে অভিযুক্ত ফারুক হোসেন বলেন, আমি আমার মাকে কখনো মারধর করিনি। আমাদের বাড়ি ভিটের জমিজমা নিয়ে ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে। আদালতে মামলাও চলছে। ভাইরা আমার মাকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। মাকে তারা যেভাবে শিখিয়ে দিচ্ছে সেভাবে মা কথা বলছেন।
কামাতকাজল দিঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। কেউ আমাকে জানায়নি। তবে ফারুক একটু উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির, এটা সবাই জানে। আমি ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ওসি আবু আক্কাছ আহমদ বলেন, আমি হাসপাতালে পুলিশ পাঠাচ্ছি। খোঁজখবর নিয়ে ওই বৃদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সফিকুল আলম/এএম/এমকেএইচ