বর্ষার ফরেনসিক পরীক্ষায় মিলেছে ধর্ষণের আলামত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ০৬ জুলাই ২০১৯

রাজশাহীর মোহনপুরের স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত মিলেছে। শারীরিক পরীক্ষার ফরেনসিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি।

গত ২৬ মে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক মিশু রাণী সাহা এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।

এক মাস পর ২৫ জুন সেই প্রতিবেদন পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। এর দুইদিন পর ২৭ জুন প্রতিবেদনটি রাজশাহীর আমলি আদালতে (মোহানপুর) দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে মন্তব্যের একাংশে চিকিৎসক মিশু রাণী সাহা বলেছেন, ভিকটিমের শরীরে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার বয়স হতে পারে ১৫ থেকে ১৬ বছর।

বর্ষা মোহনপুর উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের মেয়ে। স্থানীয় একটি স্কুলে সে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। গত ২৩ এপ্রিল উপজেলার খানপুর বাগবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।

পরিবারের অভিযোগ, বর্ষার বান্ধবী সোনিয়ার সহযোগিতায় প্রতিবেশী মুকুল তাকে অপহরণ করে। এরপর শারীরিক নির্যাতন করে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায়।

ওই ঘটনার পর পুলিশ বর্ষাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায়। সেখানে তার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বর্ষার শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা সেটি আদালতে জমাও দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বর্ষাকে অপহরণ ও আত্মহত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই ধর্ষণের বিষয়টি নেই। শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে আসায় অভিযোগপত্র দাখিলের সময় মামলায় ধর্ষণের নতুন ধারা যুক্ত হবে।

বর্ষাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করতে গেলে ওই সময় গড়িমসি করেন মোহনপুর থানার তৎকালীন ওসি আবুল হোসেন। মামলা করতে চাওয়ায় তিনি পিটিয়ে বর্ষার বাবার দাঁত ভেঙে দেয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন।

তাই পুলিশ-প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ঘটনার চার দিন পর থানায় মামলা করতে পারেন তিনি। কিন্তু ওসি আবুল হোসেন এজাহার থেকে ধর্ষণের অভিযোগ বাদ দিয়ে শুধু অপহরণের বিষয়টি রাখেন।

এদিকে, থানায় ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত মুকুলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু প্রতিবেশি এই আসামির পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে লাঞ্ছনা দিয়ে আসছিলেন বর্ষাকে।

একপর্যায়ে অপবাদ সইতে না পেরে গত ১৬ মে একটি চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা। এ নিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন বর্ষার বাবা।

বর্ষাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোহনপুর থানার তৎকালীন ওসি আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। আর সম্প্রতি তার পরিবারকে কেন ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।