মেহেদীকে স্কুলে যেতে বারণ করেছে তার বাবা
ছেলে মেহেদী হাসানকে আগামী মাস (আগস্ট) থেকে স্কুলে যেতে বারণ করে দিয়েছেন তার বাবা। ফুটপাতে আয়না-চিরুনি বিক্রি করে এ বাবা আর ছেলের আর লেখাপড়া চালাতে পারছেন না। অভাবের কাছে যেন অসহায় ও নিষ্ঠুর হয়ে গেছেন সংগ্রাম করে সংসার চালানো এ মানুষটি।
ফুটপাতে হকারি করে দিনযাপন করা শেখ শরিফের ছেলে মেহেদী হাসান ঝিনাইদহের ওয়াজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
চোখে-মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে মেহেদী জানিয়েছে, আমাদের সংসারে অনেক অভাব। বাবা বলেছে আগামী মাস থেকে আর স্কুলে যেতে হবে না।
সে জানায়, বাবার উপার্জনে সংসার চলে না। আম্মুর কাছে শুনেছি বাবা এলাকার লোকজনের কাছে সুদে টাকা নিয়ে আমার স্কুলে বেতন এবং পরীক্ষার ফি দিয়েছে। বাসা থেকে আমার স্কুলে যাওয়া আসা করতে প্রতিদিন ত্রিশ টাকা লাগে। এছাড়া বই-খাতা কেনার খরচ তো আছেই। বাবা আর আমার টাকা দিতে পারে না। এখন লেখাপড়া করবো কীভাবে, এটাই আমার চিন্তা।
মেহেদী হাসানের মা সেলিনা খাতুন বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরায় আমাদের। মেহেদীর বাবা যা রোজগার করে তাতে বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে আমাদের সংসারই চলে না। গত তিন মাসের বাড়ি ভাড়ার টাকাটাও বাকি পড়েছে।
তিনি বলেন, ছেলের যেন পড়াশোনা বন্ধ না হয় এজন্য ওর বাবা সুদের উপর টাকা নিয়ে ছেলের স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু এখন আর ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান।
মেহেদীদের বাড়িওয়ালা হোসেন খা বলেন, শেখ শরিফ তার বাড়িতে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাড়া রয়েছেন। আয়না চিরুনি বিক্রি করেই তার সংসার চলে। গত তিন মাস হলো আমার বাড়ি ভাড়ার টাকাটাও দিতে পারছে না। শুনেছি টাকার অভাবে ছেলেকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছে।
মেহেদী হাসানের সহপাঠীরা জানায়, পড়াশুনায় সে বরাবরই ভালো। গাইড বই কিনতে পারেনি বলে আমাদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে বই নিয়ে যায় মেহেদী।
মেহেদীর স্কুল ওয়াজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান জানান, আমার স্কুলে বেশির ভাগই হতদরিদ্রের সন্তান লেখাপড়া করে। অষ্টম শ্রেণিতে কোনো উপবৃত্তি নেই। তবে মেহেদীর পরিবার তাদের সমস্যার কথা জানালে যতটুকু সম্ভব আমি তাকে সুযোগ-সুবিধা দেব।
মেহেদীর বাবা শেখ শরিফ বলেন, শহরের এ্যাপেক্স শোরুমের সামনে চৌকির উপরে হরেক রকমের জিনিসপত্র বিক্রি করে যা আয় হয়। তাতে সংসার চলে না। তার ওপর মার্কেটে ২-৩ লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছে। এজন্য ছেলেকে বলেছি আগামী মাস থেকে আর স্কুলে যেতে হবে না। ছেলের ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যেভাবে লাথি গুতো খাচ্ছি সেই ভাবে সেও বড় হবে। একথা বলেই কেঁদে ফেললেন তিনি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বশির আহমেদ জানান, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। এমনকি ওরাও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমি বিষয়টির খোঁজ নেব।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএএস/এমকেএইচ