চিকিৎসকের ভুলে মৃত্যু মুখে তানিয়া, আদালতে মামলা
ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার অভিযোগে ভৈরবের মেডিল্যাব হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কে এন এম জাহাংগীর আলমসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে (মামলা নং ১৮২/২০১৯ ইং)। মামলার অপর দুই আসামি হলেন- হাসপাতালের মালিক ডা. জাহাংগীর আলমের স্ত্রী তামান্না ফেরদৌসী এবং চিকিৎসক ডা. হাফিজা খাতুন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ তানিয়া বেগমের (১৯) বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আবদুল্লাহপুর গ্রামে। গত রোববার তার বাবা আক্কাছ আলী বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে এই মামলা করেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে মামলার শুনানি শেষে আদালত ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ঘটনাটি তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করার জন্য আদেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে গত ১৭ মে তানিয়া বেগমের পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তির পর ডা. কে এন এম জাহাংগীর আলম ও ডা. হাফিজা খাতুন পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে তার বাবাকে জানান রোগীর পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এবং গর্ভে ৪ মাসের সন্তান। সে অনুযায়ী তানিয়ার চিকিৎসা করেন তারা। দুইদিন পর সুস্হ হলে তানিয়া বাড়ি ফিরে যায়।
এরপর গত ২০ মে আবার পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে ওই হাসপাতালে আনা হয়। তখন আবারও পরীক্ষা করে ডাক্তাররা জানান তার কিডনি ফুলে গেছে। চিকিৎসকদের দুই রকম কথায় রোগীর পিতার সন্দেহ হয়। পরে গত ২১ মে তানিয়াকে ওই হাসপাতাল থেকে নিয়ে বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার ডাক্তাররা জানান তানিয়ার কিডনি ফুলেনি, পিত্তথলীতেও কোনো পাথর নেই। অ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেছে। মেডিল্যাব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার কারণে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে।
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অপারেশনের পর এখন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
এদিকে চাচা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন কৃষক পরিবারের সন্তান তানিয়ার ভুল চিকিৎসার কারণে এ পর্যন্ত তাদের ৭/৮ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে।
বাবা আক্কাছ আলী এই প্রতিনিধির কাছে আজ (বুধবার) সকালে মামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ভৈরবের মেডিল্যাব হাসপাতালের ডা. কে এন এম জাহাংগীর আলমের ভুল চিকিৎসার কারণে তার মেয়ে আজ মৃত্যুর মুখে। এখনও পর্যন্ত ৭/৮ লাখ টাকা খরচ করে মেয়েকে সুস্থ করতে পারেননি। তাই আদালতে বিচার চেয়ে মামলা করেছেন।
উল্লেখ্য ডা. কে এন এম জাহাংগীর আলম ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। হাসপাতালটির মালিকানা তার স্ত্রী তামান্না ফেরদৌসীর। তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডা. কে এন এম জাহাংগীর আলমের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে তিনি সরকারিভাবে ট্রেনিং নিতে ৭ দিনের জন্য মালয়েশিয়া গেছেন।
হাসপাতালের পার্টনার মো. শাহীন জানান, এ বিষয়ে ডা. জাহাংগীর আলম বিদেশ থেকে আসার পর বক্তব্য দেবেন। তবে তিনিও এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এমএমজেড/এমকেএইচ