সাংবাদিককে এসআই বললেন ‘সব কথা কি ফোনে বলা যায়?’
গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাদক কারবারি রাসেল দর্জি (৩৬) ও মাদক বাহক কাউছারকে (২৭) আটকের একদিন পর আর্থিক সুবিধা নিয়ে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেয়া হলেও মাদক বাহককে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে উদ্ধারকৃত ইয়াবার হিসাবেও রয়েছে গড়মিল। আর এই ঘটনার সঙ্গে এক গ্রাম পুলিশের (চৌকিদার) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন কাউছারের বাবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবা আয়েছ আলী।
জানা গেছে, গত ২০ জুন দিবাগত রাতে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ছৈলাদি গ্রামে উপজেলার কাপাইশ গ্রামের মোন্তাজ উদ্দিন দর্জির ছেলে মাদক কারবারি রাসেল দর্জিকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন ছৈলাদি গ্রামের তমিজ শেখের ছেলে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) বোরহান শেখ। ওই সময় তার সঙ্গী ছিল উপজেলা মোক্তারপুর ইউনিয়নের পোটান (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আয়েছ আলীর রিকশাচালক ছেলে কাউছার।
এ সময় মাদক কারবারি চৌকিদার বোরহানকে আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথা বললে ইয়াবা রেখে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরদিন (২১ জুন) বিকাশে বোরহানের জন্য টাকা পাঠানো হয়। এরইমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার থানায় জানান।
পরে ঘটনাস্থলে যান এসআই আব্দুর রহমান। সঙ্গীয় ফোর্সসহ গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) বোরহানকে নিয়ে পুনরায় অভিযান চালান। এ সময় মাদক কারবারি রাসেল ও রিকশাচালক কাউছারকে আটক করে থানার লকআপে রাখা হয়। কিন্তু ২২ জুন ওই এসআই বাদী হয়ে থানায় ৪৪ পিস ইয়াবা দেখিয়ে একটি মাদক (নং ২৩) মামলা দায়ের করেন। আর তাতে আসামি করা হয় রিকশাচালক কাউছারকে।
মমলার আসামি কাউছারের বাবা আয়েছ আলীর বরাত দিয়ে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার জানান, পুলিশের গাড়িতে করে রাসেল ও কাউছারকে থানা থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে নিয়ে গেলেও পথে কাপাসিয়া রোড নামক স্থানে রাসেলকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে এর আগে মাদক কারবারি রাসেলের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন এসআই আব্দুর রহমান। আর চৌকিদার বোরহানকে করা হয়েছে মামলার সাক্ষী।
এ ব্যাপারে চৌকিদার বোরহানের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও মাদক কারবারির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার কথা অস্বীকার করে ফোনের লাইন কেটে দেন ও ফোন বন্ধ করে দেন।
এ ব্যাপারে থানায় গিয়ে এসআই আব্দুর রহমানকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি দু’জনকেই আটকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে সঙ্গে ইয়াবা না পাওয়ায় ওসির নির্দেশে রাসেলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং কাউছারকে নিয়মিত মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান। আর ৫০ পিস ইয়াবার মধ্যে ৬ পিস ভেঙে যাওয়ায় মামলায় ৪৪ পিস উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে আর্থিক সুবিধায় মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই সব কথা তো ফোনে বলা যায় না। সন্ধ্যায় থানায় আসেন পরে কথা হবে।’
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি মো. আবুবকর মিয়া জানান, মাদক কারবারি রাসেলের বিষয়টি তার জানা নেই। কাউছারকে ইয়াবাসহ আটক করায় তাকে মামলা দিয়ে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/জেআইএম