দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর প্রলোভনে নিঃস্ব পরিবার
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার। উপজেলায় ভূমখাড়া ইউনিয়নের উত্তর চাকধ গ্রামের সাহানা বেগমের পরিবারে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তারা নড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সাহানা বেগম জানান, তার স্বামী আবুল হোসেন হাওলাদারের মুরগির ফার্মের ব্যবসা ছিল। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। টানা পোড়নে সংসার চলতো তাদের। দুই ছেলেকে ইতালি পাঠাতে উত্তর চাকধ গ্রামের সরবত আলী হাওলাদারের ছেলে কামাল হোসেন হাওলাদার ওরফে আলমগীর দালালের (৫৫) শরণাপন্ন হন তারা। আলমগীর দালাল সাহানা বেগমের দুই ছেলেকে ফ্যামিলি ভিসায় ইতালি নিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেন। সেই আশ্বাসে ২০১৩ সালে আলমগীর দালালের সঙ্গে দুই ছেলেকে ইতালি নেয়ার জন্য ২২ লাখ টাকার চুক্তি করেন সাহানার স্বামী আবুল হোসেন হাওলাদার।
চুক্তি ছিল প্রথমে আলমগীর দালালকে অর্ধেক টাকা দিতে হবে, ইতালি নেয়ার পর বাকি টাকা দিতে হবে। তাই সাহানার স্বামী আবুল হোসেন ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা লোন তোলেন। সেই টাকা থেকে আলমগীর দালালের কথামতো তার মা হালিমা বেগমের (৭০) কাছে ৭ লাখ টাকা দেন আবুল হোসেন। এছাড়াও আবুল হোসেনের কাছ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ জমি লিখে নেন আলমগীর দালাল।
সাহানা বেগম বলেন, টাকা ও জমি দেয়ার পর আমার দুই ছেলেকে আলমগীর দালাল নিজের ছেলে বানিয়ে পাসপোর্ট ও কোর্টে এফিডেভিট করেন। কিন্তু সাত বছর যাবৎ টালবাহানা করছেন। আলমগীর দালাল এখন বলছেন আমার ছেলেদের বয়স বেশি হয়ে গেছে ইতালি নেয়া যাবে না। দালালকে নগদ টাকা ও জমি দিয়ে পথে বসেছি। ঋণের টাকা ও জমির শোকে আমার স্বামীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালে মারা গেছেন। এখন সংসার চালাতে আমার এক ছেলে রিকসা চালায় ও অন্য ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন হাওলাদার ওরফে আলমগীর দালাল বলেন, সাহানা বেগমদের কাছ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ জমি আমি কিনেছি। আর ইতালি নেয়ার জন্য যে ৭ লাখ টাকা দিয়েছে শুনেছি তা নাকি আমার মায়ের কাছে দিয়েছে। আমি টাকা পাইনি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, অনেক পরিবার দলালদের প্রতারণার স্বীকার হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। অনেকে জমি বিক্রি করে ও ঋণ করে পথে বসেছে। সম্প্রতি দালালদের মাধ্যমে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় শরীয়তপুরের নড়িয়ার ৯ যুবক সাগরে তলিয়ে যায়। তাদের অনেকেই নিহত হয়েছে। তাই সকলকে সজাগ থাকতে হবে। যদি কারো বিদেশ যেতে হয় তাহলে সরকারের দেয়া নিয়ম মেনে যাওয়া উচিৎ।
নড়িয়া থানা পুলিশের এসআই শ্যামল দত্ত বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ করেছেন সাহানা বেগম। বিস্তারিত জানার জন্য দু’এক দিনের মধ্যে দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হবে।
ছগির হোসেন/এফএ/জেআইএম