নব শালবনে বৌদ্ধ মূর্তি দেখতে পর্যটকদের ভিড়


প্রকাশিত: ০৩:১৩ এএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আর বৌদ্ধ সভ্যতার ঐতিহাসিক স্থাপনাসমৃদ্ধ কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় প্রায় আড়াই একর পাহাড়ি ভূমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নব শালবন বৌদ্ধ বিহার। এ বিহারে স্থাপন করা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ধাতব পদার্থে তৈরি প্রায় ৬ টন ওজনের ৩০ ফুট উচ্চতার বৌদ্ধ মূর্তি।

বিহারে প্রার্থনালয়ের ছাদের উপর স্থাপন করায় মূর্তিটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। এ বিহার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বিহার বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। দৃষ্টিনন্দন এ বিহারকে ঘিরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণা বেড়েই চলেছে। নব শালবন বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠার পর কুমিল্লা পর্যটন শিল্প হিসেবে আরো ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে।

Budho

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কোটবাড়ির নব শালবন বিহারের জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ থাইল্যান্ডের একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দান করা হয় ধাতব পদার্থে তৈরি ৩০ ফুট উঁচু আকৃতির ও ৬ টন ওজনের দন্ডায়মান বৌদ্ধমূর্তি। বৌদ্ধমূর্তিটি অনেক দূর থেকে অনায়াসে দেখা যায় এমন দর্শনীয় স্থান ছাদের উপর স্থাপন করা হয়েছে। এতে এ বিহারের নান্দনিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি অনেকগুণ বেড়ে গেছে এবং দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় আরো মুখর হয়ে উঠেছে নব শালবন বিহার ও আশপাশের দর্শনীয় এলাকা।

বাংলাদেশে এই প্রথম ধাতব পদার্থে তৈরি সর্ববৃহৎ আকৃতির ওই মূর্তিটি নব শালবন বিহারে স্থাপন করা হয়েছিল বিগত ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাইল্যান্ড থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পন্ডিত ব্যক্তিসহ ৭৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জানা যায়, মূর্তিটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিগত ২০১৪ সালের ২৬ জুলাই ওই বিহারে আনা হয় এবং এ মূর্তি ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হবে বিধায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ স্টোর রেন্ট ও পোর্ট চার্জসহ প্রযোজ্য যাবতীয় শুল্ক/চার্জ শতভাগ মওকুফ করেছে।

আরো জানা যায়, জেলায় প্রায় ১৫ হাজার বৌদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলার বড়ইগাঁও, দুপচর, মজলিশপুর, চুনাতি, নৈরপাড়, নূরপুর, সদর দক্ষিণ উপজেলার আলীশ্বর, লালমাই (কেশনপাড়), দত্তপুর, শালবন ও কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়া, ছোটরা, বাগানবাড়ি এলাকায় বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বসবাস করছেন।

Budho

কুমিল্লায় মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের মতো বৌদ্ধ ধর্মীয় লোকজন শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃপ্রতীম পরিবেশে বসবাস করছেন উল্লেখ করে কুমিল্লার সংঘরাজ জ্যোতি. পাল মহাথের ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শীলভদ্র মহাথের জাগো নিউজকে জানান, ধাতব পদার্থে তৈরি এমন মহা মূল্যবান বৌদ্ধমূর্তি কক্সবাজারের রামু বা এদেশের অন্য কোনো বিহার বা বৌদ্ধ মন্দিরে নেই। তিনি জানান, সবকিছু মিলিয়ে কুমিল্লার এ নব শালবন বিহার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বিহার বা শান্তি প্যাগোডা (উপাসনালয়)।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নব শালবন বিহার ও বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট কালচারাল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নব শালবন বিহার ক্যাম্পাসে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনালয়, মেডিটেশন সেন্টার, শালবন বিহার স্কুল ও এতিমখানা, লাইব্রেরি, শালবন বিহার জাদুঘর, সেমিনার হল ও হোস্টেল। স্কুলে প্লে-গ্রুপ থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী বিহারের এতিমখানায় থেকে লেখাপড়া করছে। এ বিহারে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

কামাল উদ্দিন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।