মেয়েকে বাঁচাতে মোটরসাইকেলে বেশি ট্রিপ দিচ্ছেন বাবা

মাহাবুর আলম সোহাগ
মাহাবুর আলম সোহাগ মাহাবুর আলম সোহাগ , সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ)
প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ১৯ জুন ২০১৯

হাফিজার বয়স যখন ৬ বছর তখন তার হৃদযন্ত্রে বড় একটি ছিদ্র ধরা পড়ে। এরপর স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বিভ্ন্নি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই চিকিৎসক তখনই তার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু তখন আর্থিকভাবে প্রস্তুত ছিল না তার পরিবার। পরে তাদের আর্থিক অবস্থার বিষয়টা চিকিৎসককে বুঝিয়ে বলার পর তিনি কিছু ওষুধ লিখে দেন। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যেন অস্ত্রোপচার করা হয়। সব কিছু মিলে আনুমানিক আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন চিকিৎসক।

চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের ওই ওষুধ এখনও সেবন করছে হাফিজা। এখন তার বয়স ৯ বছর। সামান্য চলাফেরা করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে সে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নীল হয়ে যায় মুখমণ্ডল। চিকিৎসক দেখানোর তিন বছর পার হলেও এখনও অস্ত্রোপচারের টাকা জোগাড় করতে পারেননি হাফিজার ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক বাবা হাফিজুর রহমান।

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কি.মি. দূরে পতাছড়া বাঙালিপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমান (৩০) ও জহুরা বেগমের (২৫) সন্তান হাফিজা। হাফসা নামে তিন বছর বয়সী তার এক বোন আছে।

হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ৬ বছর বয়সে একদিন হাফিজা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে এলাকার জালিয়াপাড়া ইসলামিক মিশনের চিকিৎসক খালিদ আল আজমের কাছে নিয়ে যাই। সেদিন তিনি কিছু ওষুধ আর পরীক্ষা দেন। ওষুধগুলো কিনলেও পরীক্ষা করাতে পারিনি। পরে অবস্থার অবনতি হলে আবারও হাফিজাকে ওই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ওইদিন তিনি একটি ইকো কার্ডিওগ্রাফি (ECHO Cardiography) নামক পরীক্ষা করেন। এজন্য তিনি কোনো টাকা নেননি। সেখানে জানতে পারি হাফিজার হৃদযন্ত্রে একটি বড় ছিদ্র আছে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা। তারাও জানান, হাফিজার হৃদযন্ত্রে ছিদ্র আছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে।

Hafija

এ ব্যাপারে কথা হয় ইসলামিক মিশন গুইমারা জালিয়াপাড়া’র সাবেক জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আল আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাফিজার রোগটিকে বলা হয় Large ASD (হৃদযন্ত্রের বৃহৎ ছিদ্র)। এ কারণে হাঁটাহাঁটি ও দৌড়াদোড়ি করলে অল্পতেই সে হাফিয়ে ওঠে। শ্বাসকষ্টে হাত-পা ও মুখ নীল হয়ে যাওয়া, খাবারে অরুচি, শরীরে অপুষ্টি এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না।

তিনি বলেন, হাফিজার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্রে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিশুদ্ধ রক্ত শরীরে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। দ্রুত তার চিকিৎসা না করালে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

হাফিজার প্রসঙ্গে কথা হয় গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাই থোয়াই চৌধুরী ও ইউপি সদস্য (বাঙালিপাড়া ওয়ার্ড) আরমান হোসেনের সঙ্গে।

আরমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারটি খুব কষ্টে চলে। হাফিজার বাবা হাবিবুর মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালায়। আমরা এলাকার লোকজন অনেক আগে থেকেই হাফিজার সমস্যাটা জানি। এলাকার মসজিদ ও স্থানীয় কিছু মানুষ মাঝে মাঝে যা সহযোগিতা করছে সেটা দিয়ে ওষুধ কিনে খেয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচার করতে যে টাকার প্রয়োজন তা জোগাড় করার মতো অবস্থা তাদের নেই।

Hafija

হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাই থোয়াই চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, হাফিজার রোগের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই জানি। তার অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা প্রয়োজন। তারা টাকা জোগাড় করলে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কিছু সহযোগিতা করবো।

হাফিজার বাবা বলেন, মেয়েটার জন্য আজও টাকা জোগাড় করতে পারিনি। মোটরসাইকেল চালিয়ে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসারের খরচ করতেই শেষ হয়ে যায়। তার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে আগের চেয়ে এখন মোটরসাইকেলের ট্রিপ বেশি দিচ্ছি। তাতেও টাকা জমাতে পারছি না। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে তার চিকিৎসার পেছনে। তার জন্য চিন্তা করতে করতে আমার হার্টটা বুঝি দুর্বল হয়ে গেছে। জানি না মেয়েটাকে বাঁচাতে পারবো কি-না?

আমরা অনেকেই অপ্রয়োজনেও টাকা খরচ করি। তার পরিমাণ যত কম বা বেশি হোক না কেন। একটু ভাবলেই দেখা যাবে আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় কারও কারও জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অথচ একটু উদ্যোগ নিয়ে সেই টাকাটা দিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। আড়াই লাখ টাকা আমাদের অনেকের অনেক বড় অঙ্কের টাকা। কিন্তু কারও কাছে এ পরিমাণ টাকা আপ্যায়ন বিলের সমান। ২৫০ জন মানুষ এক হাজার অথবা ৫০০ জন্য পাঁচশ করে অথবা ৫ হাজার মানুষ একশ করে টাকা দিলেই নতুন জীবন পাবে হাফিজা।

হাফিজাকে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন তার বাবা হাবিবুর রহমানের ০১৮৩৫৩১৫০৮১ নম্বরে।

এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।