কোদলা নদীর বুকে এখন ১০০ পুকুর
প্রায় ১০০টি পুকুর কেটে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কোদলা নদীর ২৫ কিলোমিটার অংশ দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। এখন তারা সেখানে মাছ চাষ করছে। জায়গা লিজও দিয়েছে অনেকে। এছাড়া গড়ে তুলেছে বসতি ও পাকা স্থাপনা।
কোদলা নদীতে ২ যুগের বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা চললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসক বা ভূমি অফিস কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীটির প্রবাহ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ৮ থেকে ১০টি খাল-বিলের পানি ও ১২৩টি মৌজার কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতায় ধানসহ কোন ফসল হচ্ছে না।
এলাকার বয়োবৃদ্ধরা বলছেন, চৈত্র মাসে সাঁতার কাটা হতো মহেশপুরের কোঁদলা নদীতে। এটি একটি পুরাতন নদী, কিন্তু এখন পুকুর হয়ে গেছে। তাদের অভিযোগ, নদীকে পুকুর করায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে আবাদ হচ্ছে না। এসব জমিতে আমন, ইরি, বোরো ধানের চাষ করা হতো।
স্থানীয় জয়ন আলী ও লুৎফর রহমানসহ সবার দাবি, বাঁধ আর পুকুর উচ্ছেদ করতে হবে। ব্রিজ আছে কিন্তু নদী নেই। আগে নদীতে ১২ মাস পানি থাকতো, খালের পানি নদীতে না আসায় জলাবদ্ধতা হয় বলে তাদের অভিযোগ।
মহেশপুর ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড়, ন্যাপা, কাজিরবেড়, বাঁশবাড়িয়া ও যাদবপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে কোদলা নদী বয়ে গেছে। নদীটির বাংলাদেশ সীমান্তে দৈর্ঘ্য আনুমানিক ২৫ কিলোমিটার।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, কোদলা নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে আবার ভারতে চলে যাওয়ায় বছরের সব সময়ই প্রচুর পানি থাকতো। এখনও ভারতের মধ্যের অংশে প্রচুর পানি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমানায় দখলের পর দখল হওয়ায় নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য যে খাল আকৃতির রয়েছে সেই স্থান দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নদীর বাঁশবাড়িয়া অংশে বেশি দখল করা হয়েছে। এই অংশে শতাধিক দখলদার বড় বড় পুকুর কেটেছেন। সেই সঙ্গে তারা নদীর মধ্যে বৃক্ষ রোপণ করেছেন। যেগুলো বড় হয়ে নদীকেই আড়াল করে ফেলেছে। আর এই দখলের কারণে বেশকিছু গ্রামের কৃষকদের চাষযোগ্য জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে তারা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না।
অন্যদিকে দখলদাররা বলছেন, পুকুর কেটে মাছের চাষ করায় এলাকার মানুষের বিশাল উপকার হচ্ছে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, নতুন খতিয়ান খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড করে ভূমিদস্যুরা কোদলা নদীর সবটুকু দখল করেছে। এই নদী দিয়েই বেশ কয়েকটি নদী ও বিলের পানি বের হয়। এছাড়া বড়বিল, কেউরোর বিল, ঢলঢলে বিল, তিথির বিল, পুটিমারি বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলের পানি খালে নামে। সেই খাল থেকে পানি চলে যায় কোদলায়। আর এই গোটা এলাকায় ৫ শতাধিক গ্রাম রয়েছে। যে গ্রামের ও গ্রামগুলোর মাঠের পানি কোদলা দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে তাকে।
তিনি আরও জানান, কোদলা নদীটির প্রস্থ ১৪০ থেকে ১৫০ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে তা কমে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ফুট আছে। কোনো কোনো স্থানে এর থেকেও কমে মাত্র ১০ ফুটে দাঁড়িয়েছে।
আব্দুল মালেক জানান, তার ইউনিয়ন এলাকাতেই বেশি দখল হয়েছে। এই এলাকাতে শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে, যা স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভন্ন দফতরে এই দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদী খননের জন্য আবেদন করেছেন।
এদিকে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম জানান, নদীর জায়গা দখলের সুযোগ নেই। তবে অনেকে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে জমি দাবি করছেন। আরএস রেকর্ড সম্পন্ন না হওয়ায় এখনই বলা যাচ্ছে না নদীর জায়গা কেউ দখল করেছে কি না।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সবুজ বললেন, নদী সরকারি সম্পত্তি এবং সিএস রেকর্ডে নদী হিসাবে আছে, কিন্তু আরএস রেকর্ড ভূমি দস্যূরা এই রেকর্ড করছে। এটি ভূমি অফিস বলতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা পুকুর উচ্ছেদ করে ছোট নদী-খাল, জলাশয় পুন:খনন প্রকল্পের আওতায় নদীটি খনন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সব দখল হয়ে গেছে স্বীকার করে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ
কুমার নাথ জানান, ম্যাপ অনুযায়ী কোদলা ভারত থেকে আসা একটি সীমান্তবর্তী নদী। ভারত সীমান্ত থেকে আসা নদীগুলোতে সাধারণত পানি থাকে না। আস্তে আস্তে এটি দখলমুক্ত ও প্রবাহ তৈরি করা হবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএসএইচ