৪ মাস পর বাবা জানলেন মেয়ে আত্মহত্যা করেনি

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক সাভার (ঢাকা)
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ১২ জুন ২০১৯

ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রচার করলেও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বের হয়ে এসেছে পোশাক শ্রমিক শম্পাকে হত্যা করেছেন তার স্বামী বেলাল মিয়া। এ ঘটনায় বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বেলাল মিয়া।

মঙ্গলবার ভোরে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের নিজ বাড়ি থেকে বেলালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারের পর পিবিআইয়ের কাছে স্ত্রীকে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। গ্রেফতারকৃত বেলাল একই এলাকার হারুন অর রশীদের ছেলে।

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার আশুলিয়ার দুর্গাপুরে নিজ বাসায় খাটের ওপর থেকে শম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন শম্পার চাচা সাইদুল মণ্ডল বাদী হয়ে বেলাল মিয়ার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ মামলার কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় ১২ মার্চ মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।

পিবিআই জানায়, শম্পা ছিলেন বেলালের খালাতো বোন। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। ঢাকার আশুলিয়ার ওই বাসায় তারা দেড় বছর ধরে থাকতেন। শম্পা একটি পোশাক কারখানায় এবং বেলাল মিয়া একটি ব্যাগ তৈরির কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে তামান্না গ্রামের বাড়ি থাকতো।

বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য চলে আসছিল। এর জের ধরে বেলাল স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে নিহতের চাচা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার (উত্তর) এসআই সালেহ ইমরান বলেন, মামলাটি হাতে আসার পর কয়েকবার মোবাইলে বেলালের সঙ্গে আমার কথা হয়। কিন্তু প্রতিবারই কৌশলে তিনি বোঝাতে চাইতেন শম্পা আত্মহত্যা করেছেন। বেলাল জানান ঘটনার দিন শম্পা গার্মেন্টসের পিকনিকে গিয়েছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই দিন পিকনিকে যাননি শম্পা। পরে অনেক চেষ্টা করে বেলালকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল প্রথমে জানান কারখানা থেকে এসে শম্পাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। পরে তাকে দ্রুত নিচে নামিয়ে শাশুড়িকে ফোনে বিষয়টি জানান। কিন্তু পরে জেরার মুখে বেলাল হত্যার কথা স্বীকার করেন। শম্পা পরকীয়ায় জড়িয়েছেন এমন সন্দেহ থেকে দুইজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বেলাল।

পিবিআইয়ের এসআই সালেহ ইমরান বলেন, বেলাল শুরু থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। এমনকি ঢাকা থেকে ময়নাতদন্ত শেষে স্ত্রীর মরদেহ বাড়ি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দাফন করে দেন। ঘটনার একদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের চাচা শহীদুল মন্ডল বেলাল মিয়াকে আসামি করে মামলা করেন। এ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান বেলাল।

মামলাটি প্রথমে আশুলিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করলেও ১২ মার্চ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন পিবিআইয়ের এসআই সালেহ ইমরান। তদন্তভার পেয়ে তিন মাস পর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার মনোহরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ মার্চ বেলাল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

স্বীকারোক্তিতে বেলাল জানিয়েছেন, শম্পার বড় বোনের স্বামী মিরাজের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক আছে, এমন সন্দেহ থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। ঘটনার দিন মিরাজ তাদের বাসায় আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন। ঘটনার পর বেলাল আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিয়ে জানান কথা কাটাকাটির পর তার অনুপস্থিতিতে গলায় ফাঁস দিয়েছেন শম্পা।

এদিকে, নিহত শম্পার বাবা হত্যা মামলাটি আর চালাতে রাজি ছিলেন না। শম্পার বাবার ভাষ্য, মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। পাশাপাশি বেলালের সঙ্গে তার পরিবারের মীমাংসা হয়েছে। মেয়ে তামান্নার নামে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছেন বেলাল।

পিবিআইয়ের এসআই সালেহ ইমরান বলেন, ঘটনার পর থেকে এটিতে আত্মহত্যা বলে এসেছেন বেলাল। শম্পার পরিবারও এটিকে আত্মহত্যা বলে বিশ্বাস করেছে। তবে আসামি গ্রেফতারের পর হত্যার কথা স্বীকার করায় এখন বিচার চাচ্ছে শম্পার পরিবার।

আল-মামুন/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।