নুসরাতের কবরের সামনে ব্যারিস্টার সুমনের লাইভ
মাহাবুর আলম সোহাগ মাহাবুর আলম সোহাগ , সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ)
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ০৮ জুন ২০১৯
সময়ের আলোচিত ফেসবুক লাইভ স্টার ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবার আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহানের গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন।
শনিবার তিনি সিলেট থেকে সোনাগাজী উপজেলা পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়ায় এলাকায় নুসরাতের গ্রামের বাড়ি যান এবং গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার কবর জিয়ারত করেন। এসময় নুসরাতের বাবা ও দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে তার কবরের পাশে ফেসবুক লাইভে অংশ নেন।
লাইভে তিনি বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম ছাড়া সব আসামিকে ধরা হয়েছে। তিনিও খুব দ্রুত ধরা পড়বেন বলে আশা করছি। মামলাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তদারকি করছেন। এ মামলার কোনো আসামি রেহাই পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, বিচারের ব্যবস্থা না করে নুসরাতকে আমরা ভুলবো না, এটা তার কবরের সামনে এসে বলে যাচ্ছি। যত বাধাই আসুক না কেন নুসরাতের যারা আসামি তাদের সর্বোচ্চা শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। ৪ মিনিটের ফেসবুক লাইভে ব্যারিস্টার সুমন নুসরাত হত্যাকাণ্ডে আসামিদের বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১০ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি।
গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা মামলাটি গ্রহণ করেন আদালত। সেই সঙ্গে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত এবং ৩০ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
ওইদিন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামশ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সুমন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে অধ্যক্ষ শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা করেন এবং তা ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে।
এমএএস/আরআইপি