ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক যাত্রা আমরা উপহার দিয়েছি
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চার ঘণ্টায় যাওয়া যায়। গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর থেকে উত্তর জনপদের জেলাগুলোর দিকে যে যাত্রা, সে যাত্রা ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক যাত্রা। এটি আমরা জনগণকে উপহার দিতে পেরেছি।
তিন আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। আরও কিছু কাজ আমাদের বাকি আছে। আমরা এ কাজগুলোর অনেকগুলো আগামী বছরের মধ্যে শেষ করতে পারব। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সাসেক প্রকল্পের গাজীপুর মহানগরের বাইমাইল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, সিটিতে যানজট, দুর্ভোগ এখনও রয়ে গেছে। ঈদের পর এসব নিয়ে আমরা মিটিং করব। যানজট নিরসনের স্বল্প মেয়াদি, দীর্ঘ মেয়াদি কিছু পদক্ষেপ আমরা নেব। সব স্টেক হোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করে ঢাকার জীবনযাত্রা স্বস্তিদায়ক করার জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করবো। এর মধ্যে আন্তজেলা এবং ঢাকা ও এর আশেপাশে গণপরিবহণে বিআরটিসির নতুন গাড়িগুলো স্বস্তি এনেছে। ঢাকা সিটিতে আধুনিক গণপরিবহনের যে উদ্যোগ মেয়র আনিসুল হক নিয়েছিলেন সে উদ্যোগটিও আবার নতুন করে নেয়া হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। যাতে ঢাকায় আমরা জনগণকে আধুনিক গণপরিবহন উপহার দিতে পারি এবং এখন মাঝে মাঝে যে দুর্ভোগ হয়, সেই দুর্ভোগের ইতি ঘটানো যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবহন ও সড়কে যদি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে শুধুমাত্র ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, ফোরলেন, নতুন ব্রিজ এসব স্থাপনা দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য শৃঙ্খলার যে সংকট সে সংকট থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবহনে যে বিশৃঙ্খলা এবং আমাদের সড়কে যে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান সেগুলো দূর করতে হবে। সড়কগুলো অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে হবে। যে অভিযানটা আমি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি। এটা এখনও পুরোপুরি সফলতার মুখ দেখেনি। তবে বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা দখলমুক্ত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে এ উদ্ধার অভিযানে আমরা সফল হতে পারি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আশা করি বিআরটি প্রকল্প প্রথম দিকে ঢিমেতালে চলছিল। এডিপির ফান্ডিংয়ে যে প্রজেক্টটি চলছে। সেখানে কন্ট্রাক্টরের কিছু সমস্যা ছিল। এখন বিআরটি প্রজেক্ট পিক-আপ নিয়েছে। তাদের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ তথা উত্তর জনপদে সামনের দিনগুলোতে যাতায়ত ব্যবস্থা অনেক স্মোথ হবে, অনেক সহজ হবে, অনেক নির্বিঘ্ন হবে। অনেক সময় আজকে কমে যাচ্ছে। আজকে এদিকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের যে উদ্বেগ ছিল, যে দুর্ভোগ ছিল তার অবসান হয়েছে।
আরও পড়ুন > যানজটে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সন্তান প্রসব
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ছোট ছোট যে যানগুলো রয়েছে, সেগুলো চলাচলের জন্য ফিডার রোডের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। গরীব মানুষ জীবিকার জন্য এ যানগুলো চালায় এবং গরীব মানুষ এ গাড়িগুলোতে যাতায়াত করে। এর বিকল্প ব্যবস্থাও আমাদের করতে হবে। তা না হলে এগুলো বন্ধ করেও আমাদের জনগণের চাহিদা মেটানো যাবে না। এগুলো বন্ধ করতে হলে কি বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়, এ ব্যাপারে বিআরটিএ-কে নির্দেশ দিয়েছি। তারা পেপার রেডি করছে। আমরা শিগগিরই এ ব্যাপার নিয়ে বসব এবং স্থায়ী সমাধান করব।
‘খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি থাকলে এবারের ঈদ হবে সবচে বেদনাদায়ক’ বিএনপির এমন বক্তব্যের বিয়য়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আদালতের এখতিয়ার। আর যে মামলায় তিনি কারাবন্দি এবং সাজাপ্রাপ্ত সেই মামলা বর্তমান সরকারের ফাইল করা কোনো মামলা নয়। এ মামলা বর্তমান সরকারের আমলে হয়নি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলা হয়েছিল এবং এটা আদালতের বিষয়। তারা লিগ্যাল ব্যাটলে ফেল করেছেন। বিএনপির আইনজীবীরা প্রমাণ করতে পারেননি যে তিনি নির্দোষ। এছাড়া তার মুক্তির জন্য বিএনপি চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। এজন্য তারা বার বার আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছেন তাতে জনগণ সাড়া দেয়নি। এটাতো আমাদের দোষ নয়।
ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এটা প্রতিবছরই ঘটে। এবারও ঘটেনি তা আমি বলব না। বাস্তবে এ ধরণের অভিযোগ আছে। তবে হাতেনাতে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে ঢাকার যেখানে যেখানে অভিযোগ পেয়েছি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিআরটিএর ভিজিল্যান্স টিম বিভিন্ন টার্মিনালে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, সওজের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর, বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মো. সানাউল হক, সাসেক প্রকল্পের পরিচালক আবু ইসহাক, সওজের ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান প্রমুখ।
আমিনুল ইসলাম/আরএআর/জেআইএম