দুই পুলিশকে গণধোলাই, পুলিশেরই দোষ দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ০৩ জুন ২০১৯

ভৈরবে কলেজ শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেয়ার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমান ঘটনা তদন্তে ভৈরবে যান।

বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ।

এদিকে, এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশসহ নিন্দা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অনেকেই বলেছেন, পুলিশ যদি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে তবে সমাজের নিরীহ মানুষের জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়বে।

শনিবার রাতে ভৈরব থানা পুলিশের দুই এসআই শিক্ষার্থী সজীব আহমেদকে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে সম্ভুপুর এলাকায় জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হন। খবর পেয়ে থানার অন্য পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতার হাতে আটক দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন। ঘটনায় জড়িতরা হলেন এসআই আবুল খায়ের ও এসআই আজিজুল হক।

কলেজ শিক্ষার্থীর বাবার নাম সাব মিয়া এবং বাড়ি ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকায়। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীর বাবাসহ ছয়জনকে আটক করলেও রোববার বিকেলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পুলিশ আইনের রক্ষক হয়ে কলেজ শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গেল কেন। এ কারণে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা সোলায়মান বলেন, পুলিশ যদি সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে হয়রানি করতে চায় তবে ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ঘটনাটি তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ প্রমাণিত হলে দুই পুলিশের শাস্তি দেয়া উচিত।

ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদস্যরা যদি এমন অপরাধ করে থাকেন, তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে দুই পুলিশের শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে অন্য পুলিশ সদস্যরা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়ে সাধারণ মানুষকে ভবিষ্যতে হয়রানি করবে।

এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমান সোমবার দুপুরে ঘটনার তদন্তে এসে অভিযুক্ত দুই পুলিশসহ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমানের বক্তব্য নেন।

ঘটনার সময় দুই পুলিশকে উদ্ধার করতে যেসব পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছেন তাদেরও জবানবন্দি নেয়া হয়। পরে ঘটনাস্থল ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসীসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেন মিজানুর রহমান।

এছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সজীবের বাবা সাব মিয়াসহ সেদিন পুলিশের হাতে আটক ছয়জনের জবানবন্দিও নিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার বিষয় ও পুলিশকে লাঞ্ছিত করা এবং সাধারণ মানুষকে আটক করা এসব ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে সবার বক্তব্য নিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্তে দুই পুলিশ কর্মকর্তার দোষ পাওয়া গেছে। তবে এ ঘটনায় জনতারও দোষ রয়েছে।

মো. মিজানুর রহমান আরও বলেন, পুলিশের পোশাক না পেরে শিক্ষার্থীকে পথ থেকে আটকের চেষ্টা করা পুলিশের ঠিক হয়নি। ঘটনার তদন্ত শেষ করে পুলিশ সুপারের কাছে এ বিষয়ে আমি তদন্ত প্রতিবেদন দেব।

আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।