শিক্ষার্থীকে মাদকে ফাঁসাতে গিয়ে ‘গণধোলাই’ খেল দুই এসআই

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৯:২৬ পিএম, ০২ জুন ২০১৯

ভৈরবে এক শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, ওই শিক্ষার্থীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়নি। আর গণধোলাইলয়ের ঘটনাও ঘটেনি। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী ও তার বাবাসহ ছয়জনকে প্রথমে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

ওই শিক্ষার্থীর নাম সজীব আহমেদ (১৭)। তার বাবার নাম সাবু মিয়া। বাড়ি উপজেলার সম্ভুপুর এলাকায়। তার বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রী। সজীব সম্ভুপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র।

আর ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ভৈরব থানার এসআই আবুল খায়ের ও আজিজুল হক।

কীভাবে কী হয়েছিল?

সজীবের পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, মোটরসাইকেলে চড়ে সজীব তার দুই বন্ধুকে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যার পর ভৈরব বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে যায়। বাসায় ফেরার পথে শহরের চান্দ ভান্ডারের কাছে পোশাকবিহীন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের গতিরোধ করে। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের বলেন, তোদের কাছে মদ আছে। পুলিশের কথায় ভয় পেয়ে সজীবের দুই বন্ধু একটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেলেও সজীব আটকে যায়।

তখন এসআই খায়ের সজীবকে বলেন, তোর থানায় যেতে হবে। শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলের পেছনে বসেন এসআই আজিজুল। সজীব চালাতে থাকে মোটরসাইকেল। কিন্তু শিক্ষার্থী সজীব তার বাড়ি সম্ভুপুরের সামনে গিয়ে থেমে যায়। সেখানে সজীব তার মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে বাসায় গিয়ে ঘটনাটি খুলে বলে। তার বাবা এ খবর শুনে ঘটনাস্থলে এসে লোকজন নিয়ে জড়ো হন।

এরপর স্থানীয় জনতা দুই পুলিশকে গণধোলাই দেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এলাকার কিছু জ্যেষ্ঠ লোক দুই পুলিশকে তাদের জিম্মায় রাখেন। তারপর ভৈরব থানায় খবর দিলে রাত সাড়ে ৯ টায় দুই এসআইকে উদ্ধার করে থানা পুলিশ। সেইসঙ্গে সজীবের বাবাসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।

সজীবের বাবা সাবু মিয়া বলছিলেন, আমার ছেলে মাদক সেবন করে না। পুলিশ আমার ছেলেকে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিল। তাই সে কৌশলে পালিয়ে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দা বোরহান মিয়া বলেন, আমিসহ কয়েকজন পুলিশকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করি। তা নাহলে পুলিশ আরও মার খেত।

তিনি বলেন, সজীব ছেলেটিকে কখনও নেশা করতে দেখেনি। সে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার ছেলে নয়। ভালো ছেলেকে পুলিশ মাদক দিয়ে ফাঁসাতে চেয়ে তারা নিজেরাই ফেঁসে গেছে।

পুলিশ কী বলছে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সজীবের হাতে মদের বোতল ছিল। তাই তাকে আটক করেছিলাম।

মাদক দিয়ে ফাঁসানোর কথা দুজনই অস্বীকার করেছেন।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান জানান, সজীবের হাতে মদ থাকায় পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার সময় সজীব পালিয়ে যায়।

দুই এসআইয়ের গণধোলাইয়ের শিকার হওয়ার কথা অস্বীকার করে ওসি বলেন, ঘটনার সময় সজীবের বাবাসহ ৬ জনকে আটক করলেও পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে তাদের ওইদিনই সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়া হয়। আমরা মামলা করতে পারতাম, কিন্ত বাড়াবাড়ি না করে মীমাংসা করা হয়েছে।

ভৈরব সার্কেলের এএসপি মো. রেজোয়ান দীপু জানান, আমি ঘটনা শুনে মীমাংসা করে দিয়েছি। পুলিশ ও সজীবের পরিবারসহ ভুল বোঝাবুঝির অবসান করেছি। আমি চাই, এ নিয়ে আর কেউ যেন বাড়াবাড়ি না করে।

আসাদুজ্জামান ফারুক/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।