তোর স্বামীকে ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে, ১ লাখ টাকা নিয়ে আয়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ০২ জুন ২০১৯

নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে।

শারীরিক নির্যাতন ও টাকা আদায়ের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। একই সঙ্গে ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক আহমেদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে তারা। রোববার দুপুরে নরসিংদীর পাথগাট এলাকায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীর মা তাহমিনা বেগম বলেন, ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক আহমেদ এলাকার ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছেন। সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। টাকা না দিলে ইলেকট্রিক শক দেয়া হচ্ছে। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার ছেলে সোহেল মিয়ার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান জুয়েল অ্যান্ড সোহেল এন্টারপ্রাইজ থেকে পুলিশ সুপার মিজার উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে সোহেলকে ডেকে নেন এসআই মোস্তাক। ওই সময় সম্রাট নামে আরেকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এসআই মোস্তাক। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমার ছেলেকে মারধর করার পাশাপাশি ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। পরে মদনগঞ্জ লাইন এলাকায় নিয়ে চোখমুখ বেঁধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়।

ওই সময় এসআই মোস্তাকের সহকর্মী কনস্টেবল শামসুল আমার পুত্রবধূকে ফোন করে এক লাখ টাকা নিয়ে যেতে বলেন। পরে ডিবি অফিসের সামনে গিয়ে মোস্তাকের হাতে এক লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেয়। একই সঙ্গে কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করা হয়। জানালে গুলি করে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।

ব্যবসায়ী সোহেলের স্ত্রী তাহিনুর বলেন, ‘কনস্টেবল শামসুল আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে তোর স্বামীকে ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে। বাঁচাতে চাইলে এক লাখ টাকা নিয়ে আয়। অন্যথায় লাশ নিবি। পরে টাকা জোগাড় করে এসআই মোস্তাকের হাতে তুলে দেই। তখন আমার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হয়।’

ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, হঠাৎ আমার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে এসে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক। কারণ জানতে চাইলে বলেন, কথা বলে চলে আসবেন। কিন্তু ডিবি অফিসে নেয়ার পর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে ফেলে। মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করা হয়। পরে টাকা চান তারা। কীসের টাকা জানতে চাইলে আরও বেশি মারধর করা হয়। পরে আমার বাড়িতে টাকার জন্য ফোন করা হয়। বাড়ি থেকে টাকা আনতে দেরি হওয়ায় আমার চোখ-মুখে কাপড় বেঁধে ক্রসফায়ার দিতে নিয়ে যায় তারা। পরে এক লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক আহমেদ বলেন, মূলত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সোহেল ও সম্রাটকে আনা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নিয়ে কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তবে অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তবে টাকা-পয়সা লেনদেনের ঘটনা সত্য নয়।

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার অডিও রয়েছে ভুক্তভোগীদের কাছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই মোস্তাক বলেন, ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করার কারণে হয়তো কনস্টেবল শামসুল টাকা চাইতে পারেন। তবে টাকা নেয়া হয়নি। অভিযোগকারীরা মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমি শুনেছি কাউরিয়া পাড়া এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশকে হয়রানির জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পরিবার ছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্তার মিয়া, ফারুক মিয়া, ফজলু মিয়া ও মো. শফি মিয়া প্রমুখ।

সঞ্জিত সাহা/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।