জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালের রুগ্ন দশা
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জয়পুরহাট জেলায় স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। জনবল সঙ্কটসহ নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি। দেড়শ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি জেলার প্রায় ১২ লাখ ও পার্শ্ববর্তী আটটি উপজেলার আরও চার লাখ মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল হলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এদিকে জয়পুরহাট জেলার রোগী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, বদলগাছী, দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে ৭-৮শ শিশু, নারী-পুরুষ সেবা নিয়ে থাকেন ও অান্তঃবিভাগে শতাধিক রোগী ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় দিন দিন ভেঙে পড়ছে এখানকার চিকিৎসাসেবা। রোগীদের নিজের টাকায় ওষুধ কিনে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে এ সরকারি হাসপাতালে।
গ্রেড অনুসারে এ হাসপাতালে ১৯৬ জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এখানে কর্মরত রয়েছেন ১৫১ জন। এতে শূন্য পদ ৪৫টি। হাসপাতালের প্রথম শ্রেণির জনবল অনুমোদিত রয়েছে ৪৫ জন। যেখানে কর্মরত রয়েছেন ২৮ জন। এখনোও শূন্যপদ ১৭টি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) নেই। সেই সঙ্গে জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ-সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (স্কিন অ্যান্ড ভিডি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক-কান-গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (যৌন-চর্ম)।
এছাড়াও মেডিকেল অফিসার ১৩টি পদের মধ্যে একটি পদ শূন্য, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের সাতটি পদের মধ্যে পাঁচটি শূন্য, মেডিকেল অফিসার (অ্যানেসথিসিয়া),মেডিকেল অফিসার (প্যাথালজিস্ট), মেডিকেল অফিসার (রেডিওলজিস্ট) একটি করে এবং জুনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দুইটি পদের মধ্যে দুইটিই শূণ্য রয়েছে।
অপরদিকে, স্টাফ নার্স ৪০ জনের মধ্যে ৩৪ জন, দ্বিতীয় শেণির পদে ৭৬ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৭০ জন, তৃতীয় শ্রেণির ২৭টি পদের মধ্যে ২১ জন ও চতুর্থ শ্রেণির ৪৮ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৩০ জন। এতসব শূণ্যপদের মধ্যে সীমাহীন অব্যবস্থাপনায় চলছে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের প্রতিদিনের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
জেলা হাসপাতালে নেই কোন ব্লাড ব্যাংকের ব্যবস্থা ফলে রক্তের জন্য রোগীদের বাইরে থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে হয়। হাসপাতালে কোনোরকম জটিল রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রপাচারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত জটিল রোগীদের বগুড়া ও ঢাকাসহ জেলার বাইরে পাঠানো হয়। অনেক রোগী উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অকালে মারা যাচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ওয়ার্ডসহ রোগীদের কেবিনগুলো। ২২ জন সুইপারের অনুমোদন থাকলেও মাত্র একজন সুইপার দিয়ে চলছে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার কাজ।
দুইটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ফলে হাসপাতাল চত্বরে ব্যক্তি মালিকাধীন অ্যাম্বুলেন্সের ছড়াছড়ি। সকাল নয়টা থেকেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করতে ভিড় জমান। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রয়োজনীয় বেড না পেয়ে মেঝেতে গাদাগাদি করে অবস্থান নিয়ে কোনোমতে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা পাঁচবিবি উপজেলার ফিসকাঘাট গ্রামের আহসান হাবিব ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার আদর্শপাড়া মহল্লার গুলসান আরা জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতালের টয়লেটগুলো নোংরা। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নেই ও বৈদ্যুতিক লাইট নষ্ট হওয়ায় রোগীদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া খাওয়ার মান ভালো না হওয়ায় ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না করায় বাহির থেকে রোগীদের ওষুধ সংগ্রহ করতে হয়।
জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে জানান, ১০০ বেডের হাসপাতালটি ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি ১৫০ বেডে উন্নীত করা হয়। তবে বর্ধিত ৫০ বেডের জন্য এখনো সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আলাদা জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে পূর্বের কাঠামোর জনবল দিয়েই ১৫০ বেডের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এমজেড/এমএস