এবার তরুণীদের ক্রেজ ‘ওয়াও ড্রেস’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ২৯ মে ২০১৯

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার রোমেনা আফাজ সড়কের একটি ফ্যাশন হাউস ‘ফড়িং’। বুধবার সকাল থেকেই সেখানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। যাদের বেশির ভাগই নারী। ক্রেতাদের ভিড়ে দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদের। এবার এখানে তরুণী ক্রেতাদের ক্রেজ হলো ‘ওয়াও ড্রেস’। চাঁদের মতো বাঁকা কাটিংয়ের এই পোশাক অনেকটা পশ্চিমাদের আদলে তৈরি হলেও এটি ভারত থেকে আমদানি করা। প্রকার ভেদে এই পোশাকটি সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায় মিলছে।

পাশেই বগুড়ার আরও একটি বড় ফ্যাশন হাউজ ‘কাঁশবন’। এখানে মিলছে আরেক ক্রেজ ‘বারবি গাউন’। এটি থাইল্যান্ডের তৈরি। আধুনিক এই পোশাকটি এখন উঠতি বয়সের তরুণী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সের নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সর্বনিম্ন ৬ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই পোশাকটি।

একই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বগুড়ার আধুনিক বিপণিবিতানগুলোতে এবারও উঠেছে ভারতীয় পোশাক ‘পকেট শাড়ি’। যাদের শাড়ি পরার শখ, কিন্তু শাড়ি পরতে পারেন না তাদের জন্য এই স্পেশাল আয়োজন। পকেট শাড়িটি শাড়ির মতো রেডি করা থাকে। এটির সামনে একটি পকেট রয়েছে। জামার মতো গায়ে দিলেও দেখতে অবিকল শাড়ির মতো লুক আসে। এটি ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালে ব্যবহার হয়। যে কারণে ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেশি। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এই পোশাকটি।

একইভাবে নানা নামের পোশাক কিনতে নামিদামি ফ্যাশন হাউসের আউটলেট, শো-রুম এবং বগুড়া শহরের নিউমার্কেটের বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতারা ভিড় করছেন।

দোকানিরা বলছেন, অন্যবার পবিত্র রমজানের শুরু থেকে বেচাকেনা জমে উঠলেও এবার ১৫ রমজানের পর জমে উঠেছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট ঈদের বেচাকেনা।

তারা বলেন, অন্যবারের মতো এবারও নারীদের ঈদের কেনাকাটায় ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে থাইল্যান্ডের থ্রিপিস প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পোশাক ‘ওয়াও ড্রেস।’

নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু বিপণিবিতান ও শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানেই ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানিরা। সাত সকালেই থ্রিপিস কিনতে তরুণীদের ভিড় দেখা যায় নিউমার্কেটের রনি ক্লথ স্টোরের চারটি শো-রুমে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী রেজা বলেন, এবার জর্জেটের ভারতীয় থ্রিপিস, পাকিস্তানি সুতি থ্রিপিস ও ভারতীয় ওয়াও এর মতো সিল্কের টপস বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় বিনয় ফ্যাশনের জর্জেট থ্রিপিস আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, প্লাজু থ্রিপিস সাড়ে ছয় হাজার থেকে আট হাজার টাকা, পাকিস্তানি হাতের কাজ করা থ্রিপিস তিন থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

eid-market

নিউমার্কেট ফটকে মেরিনা সড়কে প্রাইডের রূপসী বাংলা ফ্যাশন হাউসেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এখানে মেয়েদের থ্রিপিস ছাড়াও রয়েছে বাহারি শাড়ির সমাহার। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ফজলুল হক বলেন, এবার ঈদে ভারতীয় ফ্লোর টাচ, জিপসি ও আনারকলি থ্রিপিস বেশি বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে নতুন পোশাকে জমে উঠেছে শহরের ইনফিনিটি এক্সপ্রেস, ক্যাটস আই, ইস্ট্যাসি, লুবনান, রঙন, আরটিস্টি, ফড়িং, স্টাইল ট্রেন্ড, ক্যাকটাস, ঠিকানা, ইজি, চৌকাঠ, শ্রোতীধারা, দরজিবাড়ি, শৈশব, মার্চেন্ট, জেন্টল পার্কের মতো নামিদামি ফ্যাশন হাউসের আউটলেট ও শো-রুমগুলো।

কাঁশবন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঈদে ক্রেতাদের জন্য ভারত, পাকিস্থান, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আনা পোশাক রয়েছে এখানে। এর মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে জর্জেটের ওয়াও, ফ্লোর টাচ টপস, শর্ট টপস, লেহেঙ্গা ও থ্রিপিস। ভারতীয় জর্জেটের থ্রিপিস দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, পাকিস্তানি সুতি থ্রিপিস দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকা, লেহেঙ্গা চার থেকে ১৪ হাজার টাকা, টপস এক থেকে চার হাজার টাকা, জামদানি শাড়ি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। শিশুদের পোশাক ৮৫০ থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি ১ হাজার ৫০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় কেনা যাবে।

এদিকে ফ্যাশন হাউস ও তৈরি পোশাকের দোকানে ভিড় থাকলেও এবার ছিট কাপড়ের দোকানগুলোর চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখানে ক্রেতা অপেক্ষাকৃত কম। এর আগের বছরগুলোতে ১৫ রমজানের পর দরজির দোকানে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হলেও এবার এখনো অর্ডার নেয়া হচ্ছে।

বগুড়া জেলা দরজি দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন বলেন, এখনকার দিনে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী ক্রেতাই ঝুঁকেছেন রেডিমেড পোশাকের দিকে। এবার ২০ রমজান পেরিয়ে গেলেও তেমন অর্ডার নেই।

দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের নিউ মার্কেটে যারা ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন তাদের একটি বড় অংশই গ্রামের বাসিন্দা। ফসলের কেনাবেচার ওপর তাদের কেনাকাটা নির্ভর করে। কিন্তু এবার রমজানের শুরুতে ধান উঠলেও দাম কম হওয়ায় তারা কেনাকাটা করতে পারছেন না। তাদের অনেকে হয়তো শহরের পরিবর্তে উপজেলার মার্কেটগুলোতে যাচ্ছেন। তবে এত কিছুর পরেও দোকানিদের আশা শেষ মুহূর্তে কৃষক পরিবার শহরে মার্কেট মুখী হবে।

‘ড্রেস হাউসের’ মালিক ফেরদৌস জামান ফিরোজ জানান, গত ঈদ মৌসুমে এই সময়ে তিনি তার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি করলেও এবার তা কমে ২০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।

জুতার দোকান ‘বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে’ কর্মরত বিপ্লব হাসান বলেন, গেল ঈদ মৌসুমে আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন এলেও এবার তার অর্ধেকেরও দেখা মিলছে না।

লিমন বাসার/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।