বরেন্দ্র কৃষকের ঈদ আনন্দ ফিকে

ফেরদৌস সিদ্দিকী ফেরদৌস সিদ্দিকী , নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ২৯ মে ২০১৯
ফাইল ছবি

এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। সোনালী ধানে ভরেছে কৃষকের গোলা। কিন্তু তাতেও সুখ নেই দেশের অন্যতম শষ্য ভান্ডার খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের মনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক বাঁচাতে এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনছে সরকার। ধান কেনা সহজ করেছে প্রশাসন। ফলে খোলাবাজারে না গিয়ে খাদ্য গুদামে গিয়ে ধান বিক্রি করছেন কৃষক। এনিয়ে তাদের আগ্রহের কমতি নেই। তবে লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ায় সব কৃষকের ধান নিতে পারবে না খাদ্য দফতর।

ফলে বাধ্য হয়ে মণে অন্তত ৩শ টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। উৎপাদিত ধানের নায্য দাম না পাওয়ায় আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ ফিকে হতে বসেছে এখানকার কৃষক পরিবারগুলোতে।

জানা গেছে, গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকের ধান কিনছেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এনিয়ে প্রচার-প্রচারণার কমতি নেই। ফলে খাদ্য গুদামে গিয়ে ধান বিক্রিতে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। তাছাড়া ভালো দাম পেয়ে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক।

আঞ্চলিক খাদ্য দফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ২৩৫ টন। কিন্তু এই চার জেলায় এই মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৫ টন বোরো ধান উৎপাদনের কথা জানাচ্ছে আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

এবার সবচেয়ে বেশী ধানের ফলন হয়েছে নাটোরে। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৪৩ টন হারে এই জেলায় বোরো উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ১৫৭ টন। কিন্তু এর মধ্যে মাত্রা ২ হাজার ১১৫ টন কিনবে সরকার। এই জেলায় বোরো আবাদ ছিলো ৬১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে।

কৃষি অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক লাখ ৮৮ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ ছিল নওগাঁয়। ৪ দশমিক শূন্য ৩ টন হারে এই জেলায় ধান উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৮ টন। এর এই জেলায় সরকারের ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৫ হাজার ৬৬২ টন।

এর বাইরে রাজশাহী জেলায় ৭০ হাজার ১৮০ হেক্টরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৯ টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫০ হাজার ৭৮৫ হেক্টরে ২ লাখ ২১ হাজার ৪২২ টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। এবার রাজশাহীতে ২ হাজার ১২ টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক হাজার ৪৪৬ টন ধান কিনবে সরকার।

স্থানীয় কৃষি দফতর বলছে, এবারের আবহাওয়া ধান চাষের অনুকূলে ছিল। তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিলো না বললেই চলে। রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও ছিলো তুলনামূলক কম। ফলে ধানের উৎপাদন হয়েছে কাঙ্ক্ষিত।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষেতের সোনালী ধান কৃষকের মুখে খুশির ঝিলিক আনলেও ধান কাটা-মাড়াইয়ে গিয়ে ফেলে দেয় বিপাকে। শ্রমিক, সেচ, সার ও কীটনাশক বাবদ প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচা গুনতে হয়েছে ৯০০ টাকা।

কিন্তু এখনকার বাজারে ধানের দাম ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা। প্রতি মণে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। ফলে শেষ পর্যন্ত বিষাদের ছায়া নেমে এসেছেন কৃষকের চোখে মুখে। তাছাড়া সরকারের ধান কেনা কৃষকদের শেষ রক্ষা করতে পারছে না বলেও জানান কৃষকরা।

জানতে চাইলে সরকারের এই কার্যক্রম ধানের বাজারে প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করেন রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজুমল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, যে পরিমাণ ধান কেনা হবে, সেটাকে নগণ্যও বলা যায় না। এখনই বাজারে হয়তো এর তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে।

সরকারের চাল রফতানির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় বাজারে ধানের দাম আরো বাড়বে। তবে ফড়িয়ারা দাম বাড়বে না এমন তথ্য ছড়িয়ে কৃষকদের বিভ্রান্ত করবে। এনিয়ে কৃষকদেরই সচেতন হতে হবে। ধানের নায্য দাম পেতে আরো কিছুদিন ধান ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।