পালক বাবার বাড়িতে আর যেতে চায় না সায়মা
কিশোরী বৃষ্টি ওরফে সায়মাকে (১৩) খুঁজে পেয়েছে তার অভিভাবকরা। সোমবার বিকেলে পুলিশের মাধ্যমে তার নানা-নানির কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সায়মার বাবার নাম সামসের ওরফে সামসুদ্দিন। তবে তিনি তার মাকে হত্যার পর ৯ বছর ধরে পলাতক। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামে।
২০০৯ সালে সায়মার বাবা তার মা রেহানা বেগমকে গলাটিপে হত্যা করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখনও তিনি পলাতক। সায়মার একটি ছোট বোনও আছে। তার নাম ফাতেমা বেগম। মাকে হারানোর পর বাবা পালিয়ে গেলে দুই বোনই অসহায় হয়ে পড়ে।
পরে তাদের আশ্রয় হয় নানা-নানির কাছে। কিন্তু তারা দরিদ্র হওয়ায় ৯ বছর আগে সায়মাকে ঢাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলামের বাসায় পালক দেন। তার ছোট বোনকেও এবাদুলের ভাইয়ের বাসায় পালক দেন তারা। সেখান থেকে গত ১৮ মে পালিয়ে আসে সায়মা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলামের বাসায় মিম নামের এক কাজের মেয়ে ছিল। কয়েক দিন আগে তার বাসার আলমারি থেকে আড়াই লাখ টাকা চুরি হয়। তারা সন্দেহ করে মিমকে। এ সুযোগে ১৭ মে সকালে মিম ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এদিন বিকেলে সায়মাও দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর এবাদুল ইসলাম তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় একটি জিডি করেন।
এদিকে সায়মা পালানোর পরদিন গত ১৮ মে ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ভৈরবের বাসে ওঠে। এ বাসে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার একটি স্কুলের নারী শিক্ষকও তার পাশের সিটে বসেন। বাসে সায়মার সঙ্গে কিছু মানুষের কথা বলা দেখে সন্দেহ হয় ওই শিক্ষিকার। পরে তিনি সায়মাকে সহায়তা করেন এবং ভৈরবে পৌঁছার পর তাকে নিয়ে পৌর মেয়রের অফিসে যান।
ভৈরব পৌরসভার মেয়র ফখরুল আলম আক্কাছ সব ঘটনা শুনে ভৈরব থানা পুলিশকে অবহিত করে সায়মাকে রেখে দেন। এরপর বিষয়টি ফেসবুকসহ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সেই খবর দেখে ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী মোমতাজ বেগম সোমবার সকালে ভৈরব পৌরসভার মেয়রের অফিসে আসেন এবং সায়মার সব ঘটনা মেয়রকে জানান।
এসময় তিনি জানান, তার নাম বৃষ্টি নয়। তার প্রকৃত নাম সায়মা। এ বিষয়ে সায়মাকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ভয়ে সে প্রকৃত নাম বলেনি। তবে সে তার পালিত বাবার সঙ্গে যেতে আগ্রহী নয়। বার বার বলছিল আমি ওই বাসায় আর যাব না। তাকে সেখানে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে সে। যদিও তার অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন ব্যবসায়ী এবাদুল। তিনি বলেন, তাকে আমার মেয়ের মতো আদর-স্নেহ দিয়ে ৯ বছর লালন-পালন করেছি। এরপর সায়মার নানা মো. সাকিব ও নানি সালেহা বেগমকে মোবাইলে সব ঘটনা জানালে তারাও ভৈরবে এসে পৌঁছান।
তার নানা-নানির কোনো বাড়ি-ঘর না থাকায় তারা এবাদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জের চারাখালী গ্রামে বসবাস করেন। এবাদুল ইসলামের সহযোগিতায় তারা বেঁচে আছেন বলে জানান তিনি। এ কারণে সায়মা বার বার বলছিল, আমাকে নানা-নানির কাছে হস্তান্তর করলে তারা আমাকে আবার এবাদুলের কাছে দেবেন। মেয়রের কাছে কিশোরীর আকুতি ছিল, আমাকে আপনার বাড়িতে রাখুন অথবা ভালো কোনো লোকের কাছে দেন। অবশেষে তাকে বুঝিয়ে ভৈরব থানা পুলিশের মাধ্যমে নানা-নানির কাছে বিকেলে হস্তান্তর করা হয়। এসময় তাদের বলা হয়, ভবিষ্যতে সায়মাকে যেন নির্যাতন না করা হয় বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাসা থেকে আড়াই লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে। এ কারণে সায়মা ভয়ে আমার সঙ্গে যেতে চায়নি।’ তিনি বলেন, টাকা চুরির ঘটনার সঙ্গে কাজের মেয়ে মিম জড়িত। মিমের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। হয়তো এ কারণে ভয় পাচ্ছে আমার সঙ্গে যেতে। তবে আমার সঙ্গে না গেলেও তাকে আমি খুঁজে পেয়ে স্বস্তি পাচ্ছি।
সায়মার নানি সালেহা বেগম জানান, আমার নাতনির বাবা থেকেও নেই। সে আমার মেয়েকে হত্যা করে ৯ বছর ধরে পলাতক। আমি দরিদ্র মানুষ তাই এবাদুল ইসলামকে দিয়েছিলাম সায়মাকে মেয়ের মতো করে বড় করতে। পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস/পিআর