কুড়িগ্রামে ত্রাণের জন্য হাহাকার


প্রকাশিত: ০২:৪২ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। রোববার ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ও  ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়নের চার শতাধিক গ্রামের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে আরো নতুন নতুন এলাকা। ভেঙে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়ক। ফলে নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় নেই।

এদিকে, বন্যার্তদের অনেকেই এখনও ত্রাণ পাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তারা চাহিদামতো ত্রাণ না পাওয়ায় দুর্গত মানুষের কাছে যেতে পারছেন না।  

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান জাগো নিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৬ সেন্টিমিটার, দুধকুমারে ৬ সেন্টিমিটার ও ধরলায় ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।

কুড়িগ্রাম চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার অষ্টমীরচরের বাসিন্দা ময়না বেগম জাগো নিউজকে জানান, পানি বাড়তেই আছে। বানের পানিত ভাসি যাই। কেউ হামাগোগ দেখে না। ছোওয়া-পোওয়া নিয়া না খায়া আছি।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খাসের চরের বাসিন্দা মাজেদ আলী জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় সব শেষ হয়া গেছে। আবাদপাতি সব শেষ। কাজ নাই, খাবার নাই। খুব কষ্টে আছি। আল্লাহ কি করবে জানি না। কোনো চেয়ারম্যান মেম্বার এখন পর্যন্ত খোঁজ নেয় নাই।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জাগো নিউজকে জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ দিন-যাপন করছে। এর মধ্যে ৭শ পরিবারকে আধা কেজি করে চিড়া বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত ৪ মেট্রিক টন চাল ৪শ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

চিলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে জানান, আমার ইউনিয়নে ২৪শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৪ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ পেয়েছি। যা বিতরণ করা হচ্ছে।  

গত ২ সপ্তাহের টানা বন্যায় জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৬টি ইউনিয়নের ১ লাখ ২৫ হাজার পরিবারের ৬ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কৃষি বিভাগ। ১৫ দিন ধরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে ৬০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত।

এদিকে, ব্রিজ, কার্লভাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কাচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষেরা উচু রাস্তা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। চর ও দ্বীপচরগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে তারা। এ সকল এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ।

জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, জেলা প্রশাসন থেকে বানভাসির জন্য এ পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২শ ৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আরো বরাদ্দ চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।

নাজমুল হোসেন/এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।