শাহজালাল সার কারখানা : উৎপাদনের আগেই যান্ত্রিক ত্রুটি


প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

উৎপাদন কার্যক্রমে যাওয়ার আগেই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। দেশের বৃহৎ এই সার কারখানাটি আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় সবচেয়ে ব্যয় বহুল এ সার কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করতে আরো সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কারখানাটির কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে শাহজালাল সার কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত ছিল। তবে উৎপাদন শুরুর ঠিক আগে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। কারখানার মিথেনেটর কুলারে এ ত্রুটি ধরা পড়ে বলে জানা যায়। চীন থেকে আমদানিকৃত এ যন্ত্রটি তামপাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, শেষ মুহূর্তে এসে মিথেনেটর কুলারে ত্রুটি ধরা পড়ে। টেম্পারেচার কাজ করছিল না। ফলে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা যায়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগে সব কারখানায়ই এমন সমস্যা দেখা দেয়। অনেক কারখানায় আরো বড় বড় সমস্যা হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে তোলা হয়েছে জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, আশা করছি, এ মাসের মাঝামাঝি সময়েই উৎপাদন শুরু করতে পারব।

৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে নির্মাণ করা হয়েছে এ সার কারখানা। এটি নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও দুর্নীতির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। দুর্নীতি তদন্তে ফেঞ্চুগঞ্জে প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংসদীয় কমিটি।

শাহজালাল সার কারখানার প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। পূর্ণ উৎপাদন শুরুর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, ২০১২ সালের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই বছরের শুরুতে কারখানা স্থাপনের জন্য সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এর আগে চীন ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণাধীন শাহজালাল সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন সরকার ও চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ (৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা) ঋণ সহায়তা প্রদান করে। ঋণের বার্ষিক সুদহার ২ শতাংশ। ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিয়েছে।

সার কারখানাটি চীন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণ হলেও এর প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান, আমেরিকা ও নেদারল্যান্ডস। প্রকল্পটির নির্মাণের মেয়াদ শেষ হয় গত আগস্টে। আগস্টেই পূর্ণ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

কারখানাটি চালু হলে প্রতিদিন ১ হাজার ৭৬০ টন করে বছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা যাবে এবং প্রতিদিন ১ হাজার টন হিসেবে বছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হবে এই সার কারখানায়।

এ বিষয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শরিফুল ইসলামজোগো নিউজকে বলেন, প্রথম বছরেই লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা উৎপাদন সম্ভব হবে না। যে কোনো কারখানায়ই প্রথম অবস্থায় কিছু বিপত্তি দেখা দেয়। তাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে বছর দুয়েক পর থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন সম্ভব হবে।

ছামির মাহমুদ/এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।