স্কুলছাত্রীর নগ্ন ভিডিও ফেসবুকে দিলেন সরকারি কর্মচারী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ২২ মে ২০১৯
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার নগ্ন ভিডিও প্রকাশ করেছেন ফজলুল হক সাগর (৩৫) নামের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী।

এ ঘটনায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ওই স্কুলছাত্রীর মায়ের দায়েরকৃত মামলায় সাগরসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে আসামি প্রভাবশালী হওয়ার তাদের পরিবারের লোকজন ও দালালদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্যাতিত স্কুলছাত্রীসহ তার মা ও পরিবারের লোকজন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ফজলুল হক সাগর। জেলা শহরের ডোকরোপাড়া মহল্লার বাসিন্দা সাগরের বাবাও সরকারি অফিসের একজন গাড়িচালক।

সাগরের সাউন্ড সার্ভিসের ব্যবসা রয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যকরী কমিটির সদস্য তিনি। জাফরুল ইসলাম অন্তর (১৬) নামে আরেক শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সাগর। অন্তর মেয়েটির পূর্ব-পরিচিত এবং বন্ধু। পরে ধর্ষণচেষ্টার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে প্রচারের হুমকি দিয়ে ৬ মাস ধরে তাকে নির্যাতন করেছিল সাগর। একপর্যায়ে সাগরের কথা আর মানতে পারছিল না স্কুলছাত্রী। এ অবস্থায় এসএসসি উত্তীর্ণ মেয়েটি আত্মহত্যার পথে হাঁটছিল। তবে থেমে থাকেনি বাবার বয়সী সাগর। এরই মধ্যে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্কুলছাত্রীর নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেন।

এ ঘটনায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে পঞ্চগড় থানায় ১৭ মে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলার পরপরই সাগর ও মেয়েটির বন্ধু অন্তরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তবে মামলার পর থেকেই সাগরের পরিবারের লোকজন ও এক শ্রেণির দালাল মামলাটি তুলে নিতে মেয়ের মাকে চাপ দিতে থাকে। দালালের ভয়ে নির্যাতিত মেয়েসহ তার মা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

কিন্তু নির্যাতিত মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো ভয়-ভীতি প্রদানের অভিযোগ আসেনি বলে জানায় পুলিশ। ফজলুল হক সাগরের নামে পর্নোগ্রাফির মামলা হওয়ায় মঙ্গলবার (২১ মে) জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাকে সদস্য পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় নারী নেত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্য আকতারুন নাহার সাকী বলেন, এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ দিতে না পারে এটি ভাবাই যায় না। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ওই ভিডিও যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেও এই মামলার আসামি করা দরকার। ভিডিওটি মুছে ফেলতে স্থানীয়দের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল ইসলাম বলেন, সাগর আমাদের অফিসে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবরে সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্যাতিত ছাত্রীর বড় ভাই বলেন, আমরা মামলা করেছি সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশায়। তারা আমার বোনের সঙ্গে যা করেছে, তা যেন আর কারো সঙ্গে করা না হয়। তারা বলছেন, জামিনে বের হয়ে আসবে। তাদের অনেক টাকা-পয়সা আছে। মামলা করার পর অনেকেই মাধ্যম হয়ে আসছেন বিষয়টি মীমাংসার জন্য। আমরা তাদের চিনি না। তাদের অত্যাচারে আমার মা বাড়িতে থাকছেন না।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুদর্শন কুমার রায় বলেন, বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের প্রচেষ্টা ধারায় মামলা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমামিদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আসামিরা হুমকি দিচ্ছে, বাদি পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া বাদী বাড়িতে থাকতে পারছেন না বা তাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেলেও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সফিকুল আলম/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।