মেরিন ড্রাইভে ইকোট্যুরিজম গড়তে চায় কউক

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ১৯ মে ২০১৯

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভের কলাতলী দরিয়ানগর থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পাহাড় ঘিরে অত্যাধুনিক ইকো-ট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র গড়তে চায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। সাগর তীরবর্তী এসব পাহাড় ও বনাঞ্চলের ক্ষতি না করেই চট্টগ্রামের ফয়েস লেকের থেকেও আধুনিক পার্ক গড়ে বিশ্বের বুকে কক্সবাজারের পর্যটনকে অনন্য উচ্চতায় দাঁড় করানোই কউকের লক্ষ্য।

এটি বাস্তবায়নে বন বিভাগের ১৮৮ একর পাহাড়ি জমি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। আর আধুনিক ইকো-ট্যুরিজম চালুর প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে নীতিগতভাবে বিবেচনায় নিয়েছে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ। এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বনবিভাগ সূত্র মতে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল কর্মী গত মঙ্গলবার (১৪ মে) কউকের ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ার জন্য প্রস্তাবিত জমি পরিমাপ করেছেন। প্রাথমিকভাবে বনবিভাগের কলাতলী পিকনিক স্পট (দরিয়ানগর পার্ক) থেকে পার্শ্ববর্তী বড়ছড়া খালের দক্ষিণ পশ্চিম অংশজুড়ে (মেরিন ড্রাইভ থেকে পূর্বদিকে গড়ে ৫শ ফুট চওড়া) হিমছড়ি পর্যন্ত পাহাড়গুলো এ প্রস্তাবনার আওতায় রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, কলাতলীর দরিয়ানগর থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের উভয়পাশে দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পাহাড় ঘিরে একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র গড়তে চায় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সাগর তীরবর্তী এসব পাহাড় ও বনাঞ্চলকে ঘিরে চট্টগ্রামের ফয়েস লেকের চেয়েও অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে উক্ত এলাকার ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিতে আবেদন করা হয়েছে। পাহাড় ও বনাঞ্চলের ক্ষতি না করেই একটি আধুনিক ইকোট্যুরিজম সেন্টার চালু করার প্রস্তাবটি নীতিগতভাবে বিবেচনায় নিয়েছে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ।

তিনি আরও বলেন, জমি বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রকল্প গ্রহণ ও ব্যয় নির্ধারণ হবে। ইকো-ট্যুরিজমের সঙ্গে সৈকত তীরে নানা দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যসহ স্থাপত্য তৈরি করে সৌন্দর্য বর্ধন হবে। থাকবে পরিচ্ছন্ন পিকনিক স্পট। জমি বরাদ্দে ইতিবাচক সাড়া পেলে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।

Cox-Hill

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হুমায়ূন কবির বলেন, কলাতলী বিটের ১৭৪ একর ও পার্শ্ববর্তী হিমছড়ি বিটের ১৪ একর জমি নিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি ইকোট্যুরিজম সেন্টার চালু করতে চায়। বনাঞ্চল, পাহাড় ও পরিবেশে ক্ষতি না করেই তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করায় বনবিভাগ বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করছে। আশা করি তাদের কাছে বনাঞ্চল ও পাহাড় যথাযথভাবে সংরক্ষিত থাকবে।

তবে অপর এক সূত্র বলছে, যেসব পাহাড় কউকের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে ২০১১-১২ ও ২০১৩-১৪ সালে সামাজিক বনায়নের আওতায় বনাঞ্চল সৃষ্টি করে ১৮৮ জন উপকারভোগীর কাছে ১০ বছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কউকের কাছে জমি বরাদ্দ দেয়া হলে এসব উপকারভোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দরিয়ানগর-হিমছড়ি সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক বলেন, আমরা অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে বনবিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে বাগান গড়ে তোলা, পাহারাসহ নানাভাবে গাছপালা বড় করে তুলেছি। এখন উপকারভোগীদের ক্ষতিপূরণ ছাড়া সেই জমি অন্যত্র বরাদ্দ দেয়া হলে তা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরের দারস্থ হব।

তিনি বলেন, আমরা একর প্রতি অন্তত ৩ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ না পেলে চরম ক্ষতির মুখে পড়ব। তবে পর্যটনের স্বার্থে আমরাও চাই এখানে দৃষ্টিনন্দন ইকো-ট্যুরিজম গড়ে উঠুক।

কক্সবাজারের পর্যটন উদ্যোক্তা আবু সায়েম মো. ডালিম বলেন, জনবিচ্ছিন্ন বড়ছড়ার পাহাড়ের কিনারায় একযুগ আগে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করে আজকের দরিয়ানগর পিকনিক স্পট সৃষ্টি করেছিলাম। এখন আরো বৃহৎ আকারে সরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যটন উন্নয়নে এগিয়ে আসছে এটি আমাদের আশান্বিত করে। কক্সবাজারকে ঘিরে বিশ্বমানের পর্যটন বিকাশে আমরা সবসময় সহযোগী হয়ে কাজ করতে চাই।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।