ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম ঝুঁকি নিয়ে ইতালি যেও না

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৯:১৮ পিএম, ১৮ মে ২০১৯

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ শরীয়তপুরের দুই যুবকের লাশের খবর পেয়েছে পরিবার। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের শুক্রবার রাতে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নড়িয়া উপজেলার ভূমখারা ইউনিয়নের নলতা গ্রামের ইয়ার খানের ছেলে রাজিব খান (২৬) ও দক্ষিণ চাকধ গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে উত্তম দাসের (২৩) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে চাকধ গ্রামের মোকছেদ মৃধার ছেলে পারভেজ মৃধার মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার।

গ্রামবাসীরা জানায়, রাজিব খানের বাবা ইয়ার খান স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও এক ছেলেকে নিয়ে ওমান থাকেন। সংসারের বড় ছেলে রাজিব তিন বোনকে নিয়ে দেশে থাকতেন। গত বছর রাজিব বায়না ধরেন ইতালি যাবেন। সে অনুযায়ী স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্য আক্কাছ মাদবরের সঙ্গে সাড়ে সাত লাখ টাকায় চুক্তি করেন।

গত বছর রমজান মাসে রাজিব ও তার ফুপাতো ভাই রনি মোল্লা এবং ঝপসা ইউনিয়নের মোল্যাকান্দি গ্রামের লাল মিয়া হাওলাদারের ছেলে জহির হাওলাদারসহ এলাকার আরও ১০-১২ জন যুবক ওই দালালের হাত ধরে লিবিয়া যান। সেখান থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি রওনা হন। গত ১১ মে রাতে অভিবাসীবাহী নৌকাটি তিউনিসিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। নিখোঁজ হন রাজিবসহ নড়িয়ার যুবকরা।

ছেলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওমান থেকে শুক্রবার দেশে ফিরেছেন মা রাজিয়া বেগম। শনিবার রাজিবদের বাড়ি গেলে দেখা যায় রাজিয়া বেগম আহাজারি করছেন। হৃদয়বিদারক কণ্ঠে রাজিয়া বেগম বলেন, ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম ঝুঁকি নিয়ে ইতালি যেতে হবে না। টাকা দিয়ে দেশে ব্যবসা করো। কিন্তু সে শুনল না। দালালের হাতে টাকা তুলে দিল। এখন সাগরে ডুবে মারা গেলা।

দক্ষিণ চাকধ গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে উত্তম দাস স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে গত বছর স্থানীয় আক্কাছ দালালের মাধ্যমে লিবিয়া যায়। সেখান থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে তার মৃত্যু হয়।

উত্তমের বাবা গৌতম দাস বলেন, ছেলের লাশ পাওয়া গেছে এমন খবর প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি না আমাদের ছেলে মরতে পারে। সে মারা গেলে লাশটাতো পাবো, শেষবারের মতো ছেলের মুখটা দেখতে পাব।

মানবপাচারের অভিযোগে র‌্যাব আক্কাস মাদবরকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের আবু মাদবরের ছেলে।

তিউনিসিয়ার উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে নিহত পারভেজ মৃধার বাবা মোকছেদ আলী মৃধা আক্কাছ মাদবরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে নড়িয়া থানায় মানবপাচারের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মোকছেদ আলী মৃধা জানান, আক্কাছ দীর্ঘদিন থেকে এলাকার যুবকদের লিবিয়া ও ইতালিতে পাঠান। ওর মাধ্যমে অনেক যুবক প্রতারিত হয়েছে। আমাদের বলেছিল নিরাপদে পারভেজকে ইতালি পৌঁছে দেবে। কিন্তু সাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হবে তা বলেনি। আমরা আগে জানতে পারলে ছেলেকে ওইভাবে যেতে দিতাম না। আমার ছেলেটা এখন সাগরে হারিয়ে গেল।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, লিবিয়ার দূতাবাসের অতিরিক্ত কাউন্সিলর আশ্রাফুল ইসলাম জানিয়েছে তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শরীয়তপুরের রাজিব খান ও উত্তম দাস রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

মো. ছগির হোসেন/এমআরএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।