ধানের ফলন ভালো হলেও দাম কম, হতাশ কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ পিএম, ১৬ মে ২০১৯

কুষ্টিয়ায় রবি মৌসুমে বোরো ধান কাটা ও কেনাবেচা শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কম পেয়ে হতাশ কৃষকরা। গত বছর মৌসুমের শুরুতে ধান বিক্রি হয়েছে ৭৪০ টাকা মণ দরে, সেই ধান এবার বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এবার বোরোর ফলন ভালো হলেও বাজারে কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। দাম না পেলে কষ্ট করে আবাদ করা ধান চাষ থেকে তারা বিমুখ হবেন। বাজার মন্দার বিষয়টি খতিয়ে দেখা অতীবও প্রয়োজন।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় যেকোনো ফসল আবাদের জন্য মাটির গুনগত মান খুবই ভালো। এজন্য কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে ধান আবাদ করে থাকেন। ফলনও ভালো পান। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ৯০ ভাগ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ হয়েছিল। আবহাওয়া ভালো ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ করেছে কৃষক। জেলার কয়েকটি বাজারেও নতুন ধান উঠেছে। কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন।

জেলার মধ্যে ধানের সবচেয়ে বড় হাট সদর উপজেলার আইলচারা ধানের হাট। এখানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চালের মোকাম খাজানগর এলাকার চাল ব্যবসায়ীরা ধান কিনে থাকে। আইলচারা হাটে সপ্তাহের দুই দিন ধান কেনাবেচা হয়। এই হাটে গত বছরের আজকের দিনে (১৩ মে) বোরো ধান মণ প্রতি বিক্রি হয়েছিল ৭৪০ টাকা। সোমবার হাটে বোরো ধানের উঠেছিল মণপ্রতি ৬৮০ টাকা। মৌসুমের শুরুতে এমন দাম পেয়ে হতাশ কৃষক। আইলচারা হাটে ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও ট্রলিতে করে কৃষকেরা হাটে ধান নিয়ে হাজির হন।

এ সময় কৃষকেরা বলেন, হাটে ধানের আমদানি বাড়লেও দাম বাড়ছে না। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। তখন আমদানি আরও বেড়ে যাবে, সঙ্গে দাম আরও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর কৃষকেরা দ্রুত টাকা পাওয়ার আশায় ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রির জন্য হাটে ছোটেন।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করে ঘরে তুলতে (জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে মাড়াই শেষ পর্যন্ত) প্রায় ১৫ হাজার ৮৪৪ টাকা খরচ হয়েছে। ধান ও বিচালি বিক্রি করে ঘরে আসছে প্রায় ১৯ হাজার ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ চার মাস জমিতে খাটুনিতে বিঘা প্রতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। এই লাভ দিয়ে কিছুই হয় না।

জেলা বাজার তদারকি কার্যালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার আইলচারা হাটে স্থানীয়ভাবে সরু ধান বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৭৮০ টাকা দরে, মাঝারি ধান বিক্রি হয়েছে ৬৮০ টাকা দরে ও মোটা ধান বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫৮০ টাকা দরে। কুষ্টিয়ায় মাঝারি ধানের আবাদই বেশি হয়ে থাকে। গত বছরের আজকের দিনে একই হাটে সরু, মাঝারি ও মোটা ধান মণপ্রতি বিক্রি হয়েছিল যথাক্রমে ৯৫০ টাকা, ৭৪০ টাকা ও ৬৮০ টাকা দরে। বাজারে দাম বৃদ্ধি না পেলে কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন এই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল মোমেন জানান, তিনি এবার ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। পুরোটায় কেটে ঘরে তুলেছেন। হাটে দাম না পেয়ে হতাশ তিনি। এবার অতিরিক্ত খরার কারণে সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরোর উৎপাদন খরচও পড়েছে বেশি। গত বছর মৌসুমের শুরুতে চড়া দামে ধান বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন। এবার তা ভিন্ন। এক বিঘায় লাভ হয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা।

একই উপজেলার মিরপুর এলাকার চাষি আশরাফুল হক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, রোদে পুড়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান চাষ করতে হয়। অথচ দাম পাওয়া যায় না। লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা। কৃষকের দিকে কেউ খেয়াল রাখে না।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক কৃষকদের কৌশলী হতে বলছেন। তিনি বলেন, দাম যেহেতু কম সেহেতু ধান বিক্রি না করে বাড়িতে কয়েকদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন কৃষক। দাম বাড়লে সেসময় বিক্রি করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছেন।

জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, কৃষকের ধানের নায্য মূল্যে নিশ্চিত করতে হাটগুলোতে তদারকি বাড়ানো হবে।

আল-মামুন সাগর/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।