ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন জাহানারা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৬:৩০ পিএম, ১৩ মে ২০১৯

রাজধানীর উত্তরখানের একটি বাসা থেকে গতকাল রোববার রাতে উদ্ধার হওয়া মরদেহ তিনটি একই পরিবারের। তারা সম্পর্কে মা, মেয়ে ও ছেলে। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর উত্তরপাড়ায়। তাদের মৃত্যুর খবরে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের মরদেহ সোমবার সন্ধ্যায় আসবে বলে তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন। এখন মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা।

নিহতরা হলেন- মা জাহানারা বেগম মুক্তা (৪৮), ছেলে কাজী মুহিব হাসান রস্মি (২৮) ও মেয়ে আফিয়া সুলতানা মীম (২০)। মীম প্রতিবন্ধী ছিলেন। ঘর থেকে পুলিশ একটি চিরকুট উদ্ধার করে। চিরকুটে লেখা ছিল, ভাগ্য আর আত্মীয়-স্বজনের অবহেলার কারণেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

স্থানীয়রা জানান, নিহত জাহানারা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন বিআরডিবি অফিসের শাখা ম্যানেজার ছিলেন। ২০১৬ সালে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় তিনি হৃদরোগে মারা যান। ইকবাল বড়লেখায় কর্মরত থাকলেও দীর্ঘদিন পরিবারটি থাকত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। ইকবালের মৃত্যুর পর পরিবারটি ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করে। মাস দুয়েক আগে তারা বাড়ি ফিরে আসেন।

প্রতিবেশী মো. ওয়াহিদ মিয়া জানান, ইকবাল হোসেন ভাইদের সঙ্গে এলাকায় এক সঙ্গে বাড়ি কিনেন । বাড়ির ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে ভাইদের সঙ্গে তার পরিবারের দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ ছিল। বিরোধের কারণে বাড়িতে তাদের কোনো থাকার ঘর ছিল না। এ বিষয়টি নিয়ে সম্পত্তির ভাগ-ভাটোয়ারা করতে আগামী ঈদের পর বাড়িতে শালিস বসার কথা ছিল। এছাড়ও প্রতিবন্ধী মেয়েটি নিয়ে বিপাকে ছিল পরিবারটি।

ইকবাল হোসেনের ভাতিজি মারজানা সুলতানা জানান মেয়ের চিকিৎসা ও ঢাকার সাভারে তাদের মালিকাধীন একটি খালি জায়গায় নতুন বাড়ি করতে গত ৭ মে তারা ঢাকায় ভাড়া বাসায় ওঠেন। ঠিক কি কারণে তাদের মৃত্যু হলো কেউ বলতে পারছে না।

ইকবালের ভাগনি নিগার সুলতানা খবর শুনে তাদের বাড়িতে এসে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আমার মামা মারা যাওয়ার পর পরিবারটি অর্থনৈতিক কষ্টে ভুগছিল। তবে তার ছেলে মেধাবী ছাত্র ছিল। সিলেট এগ্রিকালচার ভার্সিটি থেকে পাস করার পর এবার ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিল ছেলেটি। এভাবে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হবে তা ভাবতেও পারেনি।

প্রতিবেশী মো. শাহাব উদ্দিন জানান, পরিবারটি প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। পাশাপাশি তার ভাইদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে কষ্টে ছিল পরিবারটি। এমন মৃত্যুর খবর শুনবেন কখনও ভাবতে পারেননি।

নিহত জাহানারার দেবর মো. জুবায়ের খবর শুনে তার ভাই আহসান উল্লাহকে নিয়ে সোমবার সকালে ঢাকায় গেছেন। যোগাযোগ করা হলে জুবায়ের বলেন, গত ৪ মে তারা ভৈরবের বাসা ছেড়ে ৭ মে ঢাকার উত্তরখানের ভাড়া বাসায় ওঠে। প্রতিবন্ধী মেয়েকে চিকিৎসা করানো ও সাভারে খালি জায়গায় বাড়ি করতে তারা ঢাকা যান। ঢাকায় যাওয়ার পরও তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্ত রোববার কেন তারা এক সঙ্গে আত্মহত্যা করবে আমি বুঝতে পারছি না। মৃত্যুর আগে চিরকুটের লেখার সঙ্গে তিনি একমত হতে পারেননি বলেও জানান।

তিনি বলেন, ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা তা পুলিশ সঠিক তদন্ত করে উদঘাটন করবে। কারণ এক সঙ্গে তিনজন মানুষ কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. ফজলুর রহমান জানান, এলাকায় পরিবারটি ছিল নিরীহ পরিবার। ইকবাল হোসেনের মৃত্যুর পর পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী মেয়েটির চিকিৎসা ও ছেলে লেখাপড়া এবং সংসার নিয়ে জাহানারা খুব চিন্তিত ছিলেন। তবে তিনজন এক সঙ্গে আত্মহত্যার বিষয়টি সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

আসাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।