লাউয়াছড়ায় মোবাইল টাওয়ার : পক্ষে মন্ত্রী, বিপক্ষে প্রাণিবিশেষজ্ঞরা
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই সংরক্ষিত বন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দুই কিলোমিটারের ভেতর ডলুছড়া এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানি টেলিটক। সংরক্ষিত একটি বনে মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানোর ফলে লাউয়াছড়া বন ও বণ্যপ্রাণী হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বনবিভাগ বলছে, টাওয়ারের রেডিয়েশনের কারণে পাখিদের ডিম নষ্ট হয়ে যাবে। যদিও এই টাওয়ারের পক্ষে যুক্তি দেখালেন আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “আমি অন্তত একটি বিষয় বুঝতে পারি না যে, ডিজিটাল যুগে বসে আমাদের ভাবনাটা এত পেছনে কেন? লাউয়াছড়ায় টেলিটকের টাওয়ার বানানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই টাওয়ারে গাছপালা ও বণ্যপ্রাণীর নাকি ক্ষতি হবে। আমি বুঝি না, টাওয়ার ছাড়া লাউয়াছড়ায় মানুষ কীভাবে নেটওয়ার্ক পাবে। ওখানে যদি টাওয়ার ক্ষতিকারক হয় তবে মানুষ যেখানে বাস করে সেখানে টাওয়ার কেন? সব টাওয়ার বন্ধ করে দিলে কেমন হয়!”
জানা যায়, লাউয়াছড়া বনের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ডলুছড়ার অবস্থান। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই লাউয়াছড়ার ভেতরে মোবাইল টাওয়ারের কাজ করছে টেলিটোক, ইতোমধ্যে টাওয়ার স্থাপনের জন্য মাটি কেটে বড় বড় গর্ত তৈরি করেছেন শ্রমিকরা। টাওয়ার তৈরির জন্য আনা হয়েছে বড় বড় রড। তবে সেখানে শ্রমিক ছাড়া টেলিটকের কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া এই টাওয়ার বসানো হলে লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের এবং প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। এছাড়াও বনে টাওয়ার বসালে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী থাকে। এতে গাছচোর চক্র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই বনে অপকর্ম করতে পারে। নষ্ট হবে জীববৈচিত্র্য।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান জানান, রেডিয়েশন যেকোনো প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। একটি সংরক্ষিত বন বণ্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত। প্রাণীদের জন্য তো টাওয়ারের দরকার নেই তাহলে সেখানে কার জন্য টাওয়ার নির্মাণ করা হবে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ ধ্বংস করে এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। সেখানে সংরক্ষিত বনে মোবাইল ফোনের টাওয়ার নির্মাণের সুযোগ তারা কী করে পেল?
এ ব্যাপারে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব আবুল হাসান বলেন, এমনিতেই লাউয়াছড়া নানান কারণে হুমকির সম্মুখীন, তার ওপর যদি এভাবে মোবাইলের টাওয়ার স্থাপন করা হয় তাহলে রেডিয়েশনের প্রভাবে পাখিদের ডিম নষ্ট হবে। প্রাণীদের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব পড়বে। তাই এই এলাকায় টাওয়ার স্থাপন থেকে টেলিটককে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
টাওয়ার স্থাপন কাজের ঠিকাদার অশোক জানান, এখানে টেলিটক কোম্পানির টাওয়ারের কাজ চলছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন আছে কি না তা জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।
সিলেট পরিবেশ অধিফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা এই রকম কোনো অনুমোদন দেইনি। তবে সংরক্ষিত বনের ক্ষেত্রে অবশ্যই বনবিভাগ দেখে।
তবে টেলিটক কোম্পানির ঠিকাদার আশোক জানান, তারা বনবিভাগকে জানাননি এবং বনবিভাগও এখন পর্যন্ত কোনো আপত্তি জানায়নি। সম্প্রতি বিট কর্মকর্তা এসে জায়গা টাওয়ার স্থাপনের জায়গা দেখেও গেছেন।
সহকারী বন-সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের ভেতরে এমন মোবাইল টাওয়ার বসানোর কোনো অনুমতি নেই। টওয়ারের রেডিয়েশনের প্রভাবে পাখির ডিম ও জীব-বৈচিত্র্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এছাড়াও বনে টাওয়ার বসালে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী থাকে। এতে গাছচোর চক্র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই বনে অপকর্ম করতে পারে। আমরা এখানে কোনো অবস্থাতেই টাওয়ার বসাতে দেব না।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ)শামসুল মোহিত চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, আমরা বিশেষঞ্জদের সাথে কথা বলেছি তারা যদি বলেন, টাওয়ার বনের জন্য ক্ষতিকর তাহলে আমরা বন্ধ করে দেব তবে বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে । তবে আমাদের থেকে কোন অনুমোদন তারা নেয়নি।
রিপন দে/বিএ