এসএসসির ফল পেয়ে ৭ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ০৭ মে ২০১৯

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফেল করায় ও প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় সারাদেশে সাতজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ না পাওয়ায় এবং অপর ছয় শিক্ষার্থী ফেল করায় আত্মহত্যা করেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

সাভার (ঢাকা) : পরপর তিনবার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঢাকার ধামরাইয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ফারজানা আক্তার (১৮) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সোমবাগ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফারজানা সোমবাগ ইউনিয়নের চাপিল গ্রামের ফারুক হোসেন মেয়ে।

ধামরাই থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ জানান, দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখার পর ওই শিক্ষার্থী নিজের কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। সে এর আগেও দুইবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। এবার তৃতীয়বারের মতো পরীক্ষা দিয়েও ফেল করায় আত্মহত্যা করেছে। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের পর ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে সাহাব উদ্দীন (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সাহাব উদ্দীন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লালাপুর জঙ্গলবাড়ী গ্রামের একরামুল হকের ছেলে।

সে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর নয়াদিঘী এম রফিক আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।

ওই মাদরাসার নৈশ্যপ্রহরী নুরুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে ফলাফল পাওয়ার পর বিকেলে গ্যাসের ট্যাবলেট খায় সাহাব উদ্দীন। পরে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে এসএসসি পরীক্ষায় প্রত্যাশিত জিপিএ-৫ না পাওয়ায় আসফিয়া মুন্না নিপা (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার দুপুরে ঘাটাইল পৌরসভা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নিপা উপজেলার আথাইল শিমুল গ্রামের আরশেদ আলীর মেয়ে। সে উপজেলার আথাইল শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিপার মা-বাবা দুইজনেই চাকরীজীবী। বাবা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর মা মধুপুর হাসপাতালে চাকরি করেন। এই দম্পতি তিন মেয়ে নিয়ে ঘাটাইল সদর হাসপাতালের পেছনে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।

সোমবার দুপুরে বাসায় ছয় বছরের ছোট বোন ছাড়া আর কেউ ছিল না। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর নিপা জানতে পারে সে তার প্রত্যাশিত জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে ৩.৩৯ পেয়েছে। এতে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে ধরনার সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় পার্বতী রাণী (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার বিকেলে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পার্বতী রাণী পলাশবাড়ীর কাশিয়াবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জানতে পারে সে ফেল করেছে। পরে বিকেলে সবার অজান্তে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে সে আত্মহত্যা করে।

পলাশবাড়ী থানার পুলিশের ওসি (তদন্ত) মতিউর রহমান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ সৎকারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর : দাখিল পরীক্ষায় ফেল করায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সুমাইয়া আক্তার (১৭) নামে এক মাদরাসাছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সোমবার সন্ধ্যায় রামগঞ্জ পৌরসভার টামটা এলাকায় রেহান উদ্দিন মুন্সি বাড়িতে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। নিহত সুমাইয়া আক্তার মুন্সি বাড়ির আমিন উল্যাহ সরকারের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুমাইয়া রামগঞ্জ রাব্বানিয়া কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সে গণিতে ফেল মাদরাসায় টানানো ফলাফল তালিকায় তার নাম আসেনি। এতে অভিমান করে সে আত্মহত্যা করে।

পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন জানান, মেয়েটি গণিতে অকৃতকার্য হয়েছে। এতে অভিমান করেই সে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বরিশাল : এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় বরিশালের মুলাদী উপজেলায় হেপি আক্তার নামে এক ছাত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে আগৈলঝাড়া উপজেলায় তারপিন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তামানা আক্তার নামে আরেক ছাত্রী। সোমবার বিকেলে বরিশালের দুই উপজেলায় পৃথক এ দুটি ঘটনা ঘটে।

মুলাদী থানা পুলিশের পরিদর্শক সাইদ আহমেদ তালুকদার জানান, মুলাদী উপজেলার দক্ষিণ বালিয়াতলী গ্রামের মন্টু বেপারীর মেয়ে হেপি আক্তার ছবিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার সময় মা মারা যাওয়ায় হেপি আক্তার ৪ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। ২০১৯ সালে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুনঃরায় ফেল করায় হতাশ হয়ে পড়ে। সোমবার বিকেলে সবার অজান্তে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

অপরদিকে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় তামান্না আক্তার নামের এক ছাত্রী তারপিন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তামান্না ফুল্লশ্রী গ্রামের মৃত হান্নান ফকিরের মেয়ে ও শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নড়াইল : নড়াইলে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ইলা খান নামে এক ছাত্রী মায়ের ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিকেলে সে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।

নিহত ইলা খান সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের গারোচোরা গ্রামের আজিজার খানের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইলা এবার নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সোমবার ফলাফল প্রকাশের দেখা যায় সে পদার্থ বিজ্ঞানে ফেল করেছে। ফলাফলের পর তার বাবা-মা অসন্তোষ প্রকাশ করে। ইলার মা তাকে ভৎসনা করে বলে ‘আমি বাড়ির বাইরে যাচ্ছি, বাইরে থেকে এসে যেন তোর মরা মুখ দেখি’। এর পর ইলা প্রথমে বিষ পান করে। পরে বাড়ির ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার করে।

শাহাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাচ্চু জানান, সোমবার রাতেই জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।