স্ত্রীকে হোটেলে রেখে পুলিশকে ডেকে আনলেন স্বামী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ০৬ মে ২০১৯

স্ত্রী সাবরিনা আক্তার রুমাকে ইয়াবা দিয়ে ডিবি পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন মাদক ব্যবসায়ী স্বামী জামিনুর রহমান জীবন।

রোববার দুপুরে নীলফামারী আদালতের সামনে পুলিশ ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ী জীবন ও তার সহযোগী মারিফুল ইসলামকে আসামি করে রাতেই নীলফামারী সদর থানায় মামলা হয়েছে। স্ত্রী রুমা বাদী হয়ে নীলফামারী সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

পুলিশ জানায়, স্ত্রী রুমা ও জীবনের নামে পাঁচটি মামলা আদালতে চলমান। রোববার সকালে মামলার আপস-মীমাংসার কথা বলে ছোট মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী রুমাকে নীলফামারী আদালতে আসতে বলেন জীবন। আদালতে আসার পর দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ক্যান্টিনে স্ত্রী রুমাকে ওষুধের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে জীবন বলেন, তুমি বস। আমি আদালত থেকে ঘুরে আসতেছি। ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে ডিবি পুলিশের এসআই মোকছেদুল ইসলামকে ফোন করে জীবন বলেন, রুমা নামে এক মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা নিয়ে পুলিশ ক্যান্টিনের হোটেলে বসে আছেন।

সংবাদ পেয়ে ডিবি পুলিশের এসআই মোকছেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে রুমাকে ইয়াবাসহ আটক করেন। এ সময় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতরা মালিপাড়া গ্রামের রমজান আলীর ছেলে রুমার স্বামী জামিনুর রহমান জীবন (২৮) ও তার বন্ধু একই এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মারিফুল ইসলাম (২৫) গা ঢাকা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোবাইলে প্রেম করে তিনটি বাল্যবিয়ে করেছেন জীবন। পেশায় মাংস বিক্রেতা হলেও ইয়াবা ব্যবসায়ী তিনি। দীর্ঘদিন একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন জীবন। তৃতীয় স্ত্রী রোকসানার বাড়ি তিস্তার বাঁধ সংলগ্ন হওয়ায় রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি। ২০০৮ সালে জামিনুর রহমান জীবনের সঙ্গে ডোমার উপজেলার মেলাপাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল কাদেরের মেয়ে সাবরিনা আক্তার রুমার বিয়ে হয়। রুমা-জীবনের সংসারে জান্নাতুল আক্তার জেমি (৮) ও মিনহা বেগম (১) নামে দুটি সন্তান রয়েছে।

সাবরিনা আক্তার রুমা বলেন, বিয়ের পর আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। গত আট মাস থেকে আমাদের সংসারে অশান্তি চলে আসে। আমার স্বামী জীবনের চরিত্র ভালো নয়। জয়পুরহাট সদরে জীবনের প্রথম স্ত্রী শোভা বেগম থাকার পরও আমার সঙ্গে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের ১০ বছর পর ২০১৮ সালে স্ত্রী ও দুই সন্তানের কথা গোপন রেখে রোকসানা পারভীন নামে এক জেডিসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করে জীবন।

তিনি বলেন, রোববার সকালে মামলার আপস-মীমাংসার কথা বলে আমাকে আদালতে ডেকে নেয় জীবন। আদালতে আসার পর আমাকে নিয়ে খাবার হোটেলে যায় জীবন। হোটেলে বসিয়ে আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে জীবন বলে তুমি বস, আমি আদালত থেকে আসতেছি। এরই মধ্যে পুলিশকে খবর দেয় জীবন। পরে আমাকে আটক করে পুলিশ।

জীবনের তৃতীয় স্ত্রী রোকসানা পারভীন জানায়, ছয় মাস আগে একদিন আমার ফোনে মিসকল আসে। কল ব্যাক করলে বলে রং নম্বর। জানতে চায় আপনার বাড়ি কোথায়, কী করেন? ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে জীবনের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ২৫ অক্টোবর নীলফামারীর আদালতে গিয়ে এফিডেভিট করে জীবনকে বিয়ে করি আমি। বিয়ের পর জেডিসি পরীক্ষা দেই। তখনো জানতাম না জীবন বিবাহিত। হঠাৎ একদিন জীবনের স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। আমরা সবাই তখন হতবাক হয়ে যাই। এটা কী করে সম্ভব। স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও আমাকে বিয়ে করেছে জীবন। পরে বুঝলাম এক মিসকলে প্রেম করে আমার জীবন শেষ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জামিনুর রহমান জীবন বলেন, আমাকে বিরক্ত না করে আপনারা যা পারেন লিখেন, আমি দেখে নেব। আমি আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেছি, কোনো প্রতারণা করিনি।

ইয়াবা ব্যবসা ও ইয়াবা দিয়ে নিজের স্ত্রীকে ফাঁসিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে জীবন বলেন, আমি কাউকে ফাঁসিয়ে দেইনি। আমি তো ইয়াবাই চিনি না, তাহলে কীভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ী হবো।

তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ওসি আব্দুল মোমেন বলেন, ইয়াবা দিয়ে স্ত্রীকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনায় জীবন ও তার বন্ধুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নীলফামারীর পুলিশ সুপার মুহা. আশরাফ হোসেন বলেন, স্ত্রীকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ এসেছিল। পরে স্ত্রী রুমা বাদী হয়ে স্বামী জীবন ও তার বন্ধুর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।

ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহান বলেন, আদালতে জীবনের তৃতীয় স্ত্রীর বাল্যবিয়ের মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

জাহেদুল ইসলাম/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।