অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলো তাহমিনা
ঢাকায় আইনজীবীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো কিশোরগঞ্জের তাহমিনা (১৪)। নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মেয়েটির পরিবার। প্রিয় সন্তানের অকাল মৃত্যুতে পরিবারে এখন চলছে কান্নার রোল।
এদিকে, হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।
এমন বুকফাটা আর্তনাদ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ছয়না গ্রামের দরিদ্র রিকশাচালক জয়নাল আবেদীনের চৌদ্দ বছরের মেয়ে তাহমিনার স্বজনদের। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে মাত্র সাত মাস আগে ঢাকার মিরপুর ২ নং এলাকার অ্যাড. মামুন ওরফে লিটন ও তার স্ত্রী কচির বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতে পাঠানো হয় তাহমিনাকে। আর এরই মধ্যে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। দরিদ্র রিকশাচালক জয়নাল আবেদীনের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তাহমিনা ছিল দ্বিতীয়।
তাহমিনার স্বজনদের অভিযোগ, মাসে দুই হাজার টাকা বেতনে মিরপুরের ওই বাসায় কাজে যোগ দেয়ার পর মাত্র এক মাসের বেতন দেয়া হয়। মামুনের স্ত্রী কচি কারণে অকারণে তাকে মারপিট করতো। নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
জানা যায়, গৃহকর্তা অ্যাডভোকেট মামুন ওরফে লিটনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায়। তিনি তার স্ত্রী কচিকে নিয়ে মিরপুর এলাকায় থাকেন। সাত মাস আগে মহিনন্দ ইউনিয়নের এক পরিচিত নারীর মাধ্যমে ওই বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় তাহমিনা। গত মঙ্গলবার দুপুরে তাহমিনাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে, তার বাবার কাছে খবর পাঠানো হয়। পরে জানানো হয়, তাহমিনা আত্মহত্যা করেছে।
তাহমিনার বাবা মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বুধবার বিকেলে ঢাকায় যান। অ্যাড. লিটনের মিরপুরের বাসায় গিয়ে জানতে পারেন, তার মেয়ে হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতালে গেলে জানানো হয়, তাহমিনার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
পুলিশ তার কাছে মেয়ের লাশ তুলে দেয়। বলা হয় তাহমিনা আত্মহত্যা করেছে। এ সময় গৃহকর্তা লিটন বা তার স্ত্রীকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, লাশ নিয়ে মিরপুর থানায় গেলে পুলিশ হত্যা মামলা নিতে রাজি হয়নি। এ সময় মিরপুর থানা পুলিশ মেয়ের লাশ বুঝে নেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। পরে দেখা যায়, অপমৃত্যু মামলার এজাহারে তাহমিনার বাবার স্বাক্ষর নেয় পুলিশ।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, নৃশংস নির্যাতনের পর তাহমিনাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাহমিনা আত্মহত্যা করেছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে।
তাহমিনার হালিমা খাতুন মেয়ের অকাল মৃত্যুতে তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আমার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের পর পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার দুই হাত, দুই পা, গলা, বুক, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাট ও জখমের দাগ রয়েছে। তিনি এ হত্যার বিচার দাবি করেন।
গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে গৃহকর্মী তাহমিনার মরদেহ কিশোরগঞ্জে আনা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়কের পাশে একটি খালি জায়গায় লাশ রেখে আহাজারি করতে থাকেন তাহমিনার বাবা-মাসহ অন্য আত্মীয়রা। এ সময় শত শত এলাকাবাসী সেখানে ভিড় করে। সারা দিন সেখানে মরদেহ রাখা হয়।
বিকেলে লাশ নিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফর উল্লাহ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়ে নিহতের আত্মীয় ও এলাকাবাসীকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মামুন ওরফে লিটনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব হাসান বলেন, তাহমিনার মৃত্যুর ঘটনা প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তে হত্যার নমুনা পাওয়া গেলে তখন হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।
নূর মোহাম্মদ/এআরএ/পিআর