রায় কার্যকরের অপেক্ষায় স্বজনরা
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ৫ বছর আজ। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে স্বজনরা মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের একটাই অপেক্ষা কখন কার্যকর হবে নৃশংস এ ঘটনায় উচ্চ আদালতের দেয়া রায়।
উপরন্তু এখনও বহুল আলোচিত ৭ খুনের এ ঘটনায় বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। এছাড়া কারাগারে থেকেও নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা বহাল তবিয়তে এলাকায় ব্যবসাসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
হাইকোর্টের দেয়া রায় সুপ্রীম কোর্টেও বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি। তিনি দাবি করেন, উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন সেই রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু ৭ জন মানুষ নয় সাতটি পরিবারকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমিসহ সবাই আতঙ্কে আছি, অপেক্ষা করছি কবে এই রায়টি কার্যকর হবে।
একই ঘটনায় নিহত মনিরুজ্জামনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বলেন, সিটি কর্পোরেশনে খণ্ডকালীন চাকরি করে সংসার ও মেয়ের পড়াশোনা করাচ্ছি। সংসারে অভাব অনটনে দিন কাটছে।
নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছরে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন নিহতদের স্বজনরা। স্বজন হারানোর ব্যথায় এখনও কাতর তারা। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হলেও পরবর্তীতে কেউ খোঁজ নেয়নি। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এতকিছুর মধ্যেও অপেক্ষায় রয়েছেন সাত খুন মামলার রায় কার্যকরের দিনটির জন্য।
২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ মামলার রায়ে প্রধান আসামি নূর হোসেন ও সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরবর্তীতে আসামিপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায়ে নূর হোসেন, র্যাবের তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যদণ্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। বর্তমানে আসামিপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে সম্প্রতি ১৩টি আপিল করা হয়েছে বলে জানান আপিল বিভাগের সেকশন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তারা আপিলে খালাস চেয়েছেন। প্রক্রিয়া শেষে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হবে।
এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জন হচ্ছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বরখাস্তকৃত কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক দুই কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, সিপাহি আবু তারিক, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক বেলাল উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, আরওজি আরিফ হোসেন ও সৈনিক আল আমিন সরকার।
আপিল করা যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ জন হলেন, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, জামাল উদ্দিন ও সেলিম।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। র্যাব-১১’র তৎকালীন কিছু বিপথগামী সদস্য নূর হোসেনের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভমান হয়ে তাদের নৃশসংভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। পরে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল নজরুলসহ ৬ জন এবং পরদিন ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে।
হোসেন চিশতী সিপলু/এফএ/জেআইএম