কিশোরদের ভয়ঙ্কর গ্রুপিংয়ের বলি স্কুলছাত্র মিরন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

কুমিল্লা নগরীর মডার্ন হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরন হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া দুই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আমিন ও তার বন্ধু সৌরভ হোসেন পল্টু। চট্টগ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে তাদেরকে গ্রেফতারের পর বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়।

গ্রেফতারকৃত আমিন নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মডার্ন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র এবং একই এলাকার নোয়াব মিয়ার ছেলে। আমিনের বন্ধু পল্টু একই এলাকার বাসিন্দা ও একটি দোকানের কর্মচারী।

স্কুলছাত্র মিরন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পাঁচ ছাত্র ও অভিযুক্ত তুষার আহাম্মদ রিয়াদকে (১৫) আটক করা হয়। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া দুই কিশোরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা দুটি চাকু সরবরাহ করেছিল নিপু নামের এক যুবক। তাকেও গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া।

তিনি বলেন, সম্প্রতি নগরীর শেখ ফজিলাতুন্নেছা মডার্ন হাই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ‘বড় ভাই-ছোট ভাই’ সম্বোধন নিয়ে মিরনের বন্ধু নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার মডার্ন হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আবিরের সঙ্গে আমিনের ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়ার জের ধরে ২১ এপ্রিল শবে বরাতের রাতে নগরীর ঠাকুরপাড়ার মদিনা মসজিদের সামনে আমিন, তার বন্ধু পল্টু, তুষার ও নিপুসহ আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে আবিরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আবিরকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় তার বন্ধু মিরন।

ওসি আরও বলেন, ওই সময় দুই গ্রুপের মধ্যে হাতিহাতির একপর্যায়ে আমিন ও পল্টু তাদের হাতে থাকা চাকু দিয়ে মিরনের পেটে, পিটে ও ডান উরুতে ছুরিকাঘাত করে আত্মগোপনে চলে যায়। ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা চাকু দুটি সরবরাহ করেছিল নিপু নামের এক যুবক। এ ঘটনায় নিহত মিরনের চাচা কামরুল হাসান পরদিন আমিন ও পল্টুসহ দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।

এদিকে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়ার নেতৃত্বে প্রথমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তুষার আহাম্মদ রিয়াদকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয় রিয়াদ। পরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের প্রধান ঘাতক আমিনের গ্রামের বাড়ি জেলার মুরাদনগর এবং পরে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে চট্টগ্রামের নগরী থেকে ঢাকাগামী বাসে ওঠার সময় আমিন ও পল্টুকে গ্রেফতার করা হয়।

ওসি আরও বলেন, এরই মধ্যে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পাঁচ জন ছাত্র ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত তুষার নামের একজন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই কিশোর গ্রেফতার হওয়ায় এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে। মূলত কিশোরদের গ্রুপিংয়ের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কোতোয়ালি মডেল থানা পুুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক নুরুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম।

এদিকে, বয়স বিবেচনায় কিশোর আমিন ও পল্টুর কিশোর আদালতে বিচারসহ কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হবে বলে জানায় পুলিশ।

মো. কামাল উদ্দিন/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।