বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, বকেয়া বিলের মামলায় কারাগারে তিনি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতি ও তাদের পালিত দালালদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও বকেয়া বিলের কারণে দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে আব্দুল মতিন মিয়া (৪৮) নামে এক দিনমজুরকে। বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে ওই নিরপরাধ ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আব্দুল মতিন মিয়া জেলার উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের মৃত অহিদ আলীর ছেলে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বুধবার এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসে গ্রাহকরা ভিড় জমান এবং এমন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত দালাল ও অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানায়, মুরাদনগরের মোচাগড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বিদ্যুৎহীন ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চার বছর আগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল আবুল কালাম আজাদ ও আবুল বাশার প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা আদায় করে। ওই সময় আব্দুল মতিন মিয়ার নামেও কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগের ফাইল অনুমোদন করে। কিন্তু আব্দুল মতিন মিয়া দালাল চক্রের হাতে ৪ হাজার টাকা দিলেও বাকি টাকা দিতে না পারায় তাকে সংযোগ দেয়া হয়নি।

কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে আব্দুল মতিন মিয়ার ছবি পাল্টিয়ে একই বাড়ির মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে সফিকুল ইসলামের ছবি লাগিয়ে দেয়া হয়। বিগত ২০১৫ সালের ২২ মার্চ আব্দুল মতিন মিয়ার নামীয় মিটারটি প্রায় পাঁচশত গজ দূরে সফিকুল ইসলামের ঘরে সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ১৭ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখা হয়। এতে ১৭ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চার হাজার সাত টাকা আদায়ের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মঙ্গলবার রাতে থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিন মিয়াকে গ্রেফতার করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লার কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে এলাকার মানিক মাস্টার, সৈয়দ তরুণ মিয়া, সেলিম সরকার, মনির হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, গাফিলতি এবং তাদের নিযুক্ত দালালদের কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিরপরাধ আব্দুল মতিন মিয়ার গ্রেফতার দুঃখজনক।

মুরাদনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মনজুর আলম জানান, বিদ্যুৎ বিল বকেয়াা সংক্রান্ত মামলায় আব্দুল মতিন মিয়ার নামে ঢাকা থেকে প্রেরিত গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এখানে পুলিশের কিছুই করার ছিল না। বিষয়টি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিভাগের।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম হাবিবুর রহমান আবেদন ফাইলে ছবি পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আব্দুল মতিন মিয়া নামের মিটারটি সফিকুল ইসলাম ব্যবহার করতো তা আমাদের জানা ছিল না। মামলা হওয়ার পূর্বে আব্দুল মতিন মিয়াকে নোটিশ করা হয়েছে। তখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আজ হয়তো এ ঘটনাটি ঘটতো না।

কামাল উদ্দিন/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।