গৃহবধূকে হত্যার ৩ মাস পর আদালতে মামলা


প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জালকুড়ি মাইজপাড়া মাদবর বাজার এলাকায় উম্মে সালমা নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর তিন মাস পরে হত্যার অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘ক’ অঞ্চল আদালতে পিটিশন (৮১/২০১৫) দাখিল করেন মৃতের মা ছালেহা বেগম।

মামলায় ছালেহা বেগম উল্লেখ করেন, তার মেয়ে উম্মে সালমার স্বামীর ভাগ্নির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের কথা ফাঁস করে দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আদালত পূর্বতন মামলার প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আসামিরা হলেন, নিহতের স্বামী সাবেক নৌ বাহিনীর সদস্য আবু তালেব, তার বোন নাসিমা বেগম, ভগ্নিপতি রুহুল আমিন, ভাগ্নি রাত্রী বেগম, শাশুড়ি জবেদা বেগম, রেখা বেগম ও ফারুক মিয়া।

মামলার পিটিশনে মৃতের মা ছালেহা অভিযোগ করেছেন, গরীব কৃষকের মেয়ে হওয়ায় তার মেয়ে সালমাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। সালমার স্বামীর ভাগ্নি রাত্রী বেগমের স্বামী রিফাত বিদেশে থাকতো। রাত্রী বেগম মুজাফফর নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল।

বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে, রাত্রীর পিতা রুহুল আমিন রাত্রীকে মারধর করে। ওই সময় রিফাত রাত্রীকে ফোনে না পেয়ে সালমার কাছে ফোন দিলে সালমা পরকীয়ার বিষয়টি ফাঁস করে দেয়। এতে সালমার স্বামী আবু তালেব ও তার পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে ১৭ মে রাত ১০টা থেকে ১৮ মে ভোর পৌনে ৬টার মধ্যে যেকোন সময় সালমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

পরে সুকৌশলে সকল আসামিরা হত্যার দায় থেকে বাঁচার জন্য সালমার মরদেহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রাখে। এরপর মৃতের স্বামী আবু তালেব মৃতের পরিবারকে এসে বলে সালমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরে মৃতের মা গিয়ে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে সালমার ঝুলন্ত মরদেহ। এ সময় তিনি স্বামী আবু তালেব ও অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোন কথা না বলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বিবাদীপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাদিপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করান। এছাড়া তৎকালীন সিভিল সার্জনও আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যার পরিবর্তে আত্মহত্যার রিপোর্ট প্রদান করেছেন।

এদিকে, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা হলেও আসামিরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের গ্রেফতারে পুলিশ গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ বাদীপক্ষের। মঙ্গলবার বিকেল থেকে আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে বিচরণ করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি।

অভিযোগ রয়েছে, আসামিদের সঙ্গে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ইতিমধ্যে মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছেন। এখন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।

বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাহজাদা দেওয়ান জানান, আগামী ৫ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া পূর্বতন আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলাটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি ওই চার্জশিটে দোষীদের বাদ দেয়া হয় তাহলে বাদীপক্ষ নারাজি দিবে।
 
শাহাদাৎ হোসেন/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।