এক পরীকে নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তার বাবা

মাহাবুর আলম সোহাগ
মাহাবুর আলম সোহাগ মাহাবুর আলম সোহাগ , সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ)
প্রকাশিত: ০৬:৪৬ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

আমাদের সন্তানদের ঘিরে মাঝে মধ্যেই স্বপ্ন দেখি তাকে ভবিষ্যতে কি বানাবো? যখন কোথাও চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার অথবা অবাক করা ভালো সেবা পাই তখন মনে হয় সন্তানকে ডাক্তার বানাবো। আবার কখনও কোনো সরকারি/বেসরকারি কর্মকর্তার মুগ্ধ করা আচরণ ও সাফল্য দেখে ডাক্তার বানানোর সিদ্ধান্ত থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সরে এসে মনে হয় সন্তানকে সেই কর্মকর্তার মতোই মানুষ বানাবো। এমন শত শত স্বপ্ন তৈরি হয় সন্তানদের ঘিরে। কিন্তু যখন সেই সন্তান মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে তখন সকল চাওয়া পাওয়ার ব্যতয় ঘটে। সেই সময় বাবা-মায়ের শেষ চাওয়া হয় যেকোনো মূল্যে তার সন্তানকে বাঁচাতে হবে। তেমনি এক বাবা জীবনের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ করছেন।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লান্ত শরীরে যে বাবা পরীর মতো দেখতে ফুটফুটে সন্তানকে কোলে নিয়েই ক্লান্তি দূর করতো সেই বাবা আজ ওই পরীকে নিয়ে ঘুরছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কীভাবে তিনি তার পরীকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন সেই পথ খুঁজছেন তিনি। বাবার তিন বছর আট মাস বয়সী সেই পরীটা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডাক্তার বলেছেন, দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে ফুটফুটে শিশু তাসনিম জাহানের। দেরি করলেই তাকে আর বাঁচানো যাবে না।

pori

রোববার পহেলা বৈশাখের দিন যখন সারাদেশের মানুষ উৎসব আমেজে ব্যস্ত, সেদিনও মেয়েকে নিয়ে ঘরে বসে ছিলেন না এই বাবা। বিকেলে অসুস্থ মেয়েকে কোলে নিয়ে রাজধানীর ডেমরা থেকে ছুটে আসেন জাগো নিউজের কার্যালয়ে। অনেক স্বপ্ন ও আস্থা নিয়ে এসেছেন তিনি। তার চোখে জাগো নিউজের এ কার্যালয় যেন একটি হাসপাতাল। এখানে এলে নাকি কিছু না কিছু সাহায্য পাওয়া যায়। তাই ৪৮০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে এসেছেন তিনি। জানি না এ বাবার সেই স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়াবে কীনা সেই উদার ও মহৎ মানুষগুলো। যারা অসহায় মানুষের সেবা করে তৃপ্তি পান।

pori

নারায়ণগঞ্জের একটি রড-সিমেন্টের দোকানে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন তাসনিমের বাবা জাহিদুল ইসলাম। থাকেন রাজধানীর ডেমরার তামপুরাবাদ এলাকায়। সেখান থেকে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে যাওয়া আসা বাবদ মাসে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় তার। বাকি টাকায় একরুমের বাসা ভাড়াসহ চলে তার সংসার।

মেয়ের চিকিৎসার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হঠাৎ জ্বর হয় তাসনিমের। সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে ডাক্তার দেখানোর পর ৫টি ব্লাড টেস্ট দেয়া হয় তার। পরদিন ডাক্তার জানান, রিপোর্ট ভালো না। পরে আবারও টেস্ট করতে বলেন তিনি। ২য় দফার রিপোর্টও সেই আগের মতো। ডাক্তার জানান, তাসনিমের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তি করেন। সেখানে ৭ দিন থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার ও নার্সদের খারাপ আচরণে অতিষ্ট হয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। বাড়ি যাওয়ার দিন নার্সদের রুমে গিয়ে মেয়ের হাত থেকে ক্যানোলা খুলে দেয়ার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করার পর আড়াই ঘণ্টা দেরিতে এসে এক নার্স মেজাজ দেখিয়ে এমন জোরে সেটি খুলেন যে তাসনিমের হাতের মাংস ছিড়ে চলে আসে পাইপের সঙ্গে। এ কথা বলা মাত্রই কেঁদে দেন জাহিদুল। সঙ্গে সঙ্গে তাসনিমেরও বিষয়টি মনে পড়ে যায় এবং বলে উঠে ‘বাবা অনেক রক্ত’। বাবা-মেয়ের ওই সময়ের দৃশটি হৃদয় বিদারক ছিল।

তিনি বলেন, ওই ৭ দিনে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয় আমাদের। পরে এলাকাবাসী পরামর্শ দেন ভারতের মুম্বাইয়ে টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার। সেখানে নাকি ক্যান্সার রোগীদের ভালো চিকিৎসা হয়। কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। আত্মীয়-স্বজনরাই প্রায় ৩ লাখ টাকা সহযোগিতা করেন আমাকে। এত টাকা সহযোগিতা পাব ভাবতেও পারিনি। যাহোক, পাসপোর্ট ভিসা করে ভারতে নেয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা বললেন, ৬ মাস সেখানে চিকিৎসা নিলেই ৮০ ভাগ সুস্থ হয়ে যাবে তাসনিম। কেমো থেরাপিতেই সুস্থ হয়ে যাবে সে। মোট ৪টা কেমো দেয়ার বিষয়ে বলেছিল সেখানে। একটা কেমো দিতে হয় কয়েকভাগে। সেখানে একটা কেমোর একভাগ দেয়ার পর টাকা শেষ হয়ে যায় আমাদের। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায়, সঠিক সময়ে বাংলাদেশে এ কেমোগুলো যেন দেয়া হয়। এরপর দেশে চলে আসি। আবারও যাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারতীয় ফাইল দেখে তারা আর ভর্তি নেয়নি তাসনিমকে।

pori

জাহিদুল বলেন, বর্তমানে মিরপুর ডেলটা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক মোমেনা বেগমের চিকিৎসা নিচ্ছে তাসনিম। এখানে কেমো দেয়া হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে রক্তও দিতে হচ্ছে (ও পজিটিভ)। আজও ছিল কেমো দেয়ার ডেট। কিন্তু টাকা না থাকায় যাইনি।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করেছি। সব মিলে আরও ৭ লাখ টাকা খরচ করতে পারলে মেয়ের পুরো চিকিৎসা করাতে পারবো। কিন্তু সেই টাকা পাব কোথায়? আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আর যাওয়ার মুখ নেই। তাই আপনার কাছে (প্রতিবেদককে) এসেছি। যদি কোনো উপায় হয়। শুনেছি আমাদের দেশে অনেক হৃদয়বান মানুষ আছে। তারা নিরবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তারা যদি আমার মেয়েটার পাশে দাঁড়াতো হয়তো সুস্থ হয়ে যাবে তাসনিম।

তাসনিমকে সহযোগিতার আগ্রহ থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন তার বাবার সঙ্গে। মোবাইল : ০১৬৩১-০১৭৪৩৩ (বিকাশ চালু আছে)। এছাড়াও সহযোগিতা পাঠাতে পারবেন তানিয়া আক্তার, হিসাব নম্বর : ১২৮১৫১২৩৩০৮, ডাচ বাংলা ব্যাক, শিমরাইল শাখা, ঢাকা।

এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।