ফেনীর সর্বত্র শোক, জড়িতদের ফাঁসি দাবি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯
যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুতে ফেনীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে নুসরাতের মৃত্যুর খবর টেলিভিশনে দেখে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও দোষীদের ফাঁসি দাবি।
ফেসবুকে শেখ তাজউদ্দিন চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ঘুমিয়ে গেলি নুসরাত মা- বড্ড অস্থিরতায় আছি। প্রিয়জন হারানোর বেদনার মত বুকটা ফাঁকা হয়ে আসছে। তবে কুৎসিত সোনাগাজীর (ফেনী) মানুষগুলোকে আর দেখতে হবে না তোকে মা। যারা তোকে হত্যার নেপথ্যে তাদের মুক্তির জন্য মিছিল করে সেইসব মানুষ রূপী জানোয়ারদের দেখতে হবে না। ঘুমিয়ে যাও, আর আমাদের ক্ষমা করো, আমরা কিছুই করতে পারিনি। কতটা কষ্ট সয়েছিস মা শেষ কয়টা দিন। আল্লাহ নুসরাত জাহান রাফিকে শান্তির ঘুম দাও।
এমডি হানিফ নামে একজন লিখেছেন, আগুনে দগ্ধ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত রাত ৯.৩০ মিনিটে মারা গেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইলাইহি। রাজিউন নুসরাতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ যেন নুসরাতকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন, আমিন। পাশাপাশি নুসরাত হত্যার জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ফাঁসিতে ঝুলানোর জোর দাবি জানাই ।
কামাল উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, আল্লাহ এই বোনকে শহীদের মর্যাদা দিও। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত কুলাংগার সোনার ছেলেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বরেণ্য লেখক স্বকৃত নোমান লিখেছেন, মধ্যযুগীয় বর্বরতা। কথাটি প্রায়ই শোনা যায়। মধ্যযুগ কাহাকে বলে? কত সাল থেকে কত সাল? মধ্যযুগের বর্বরতার ধরন কেমন ছিল? আমার তো মনে হয় বর্তমানের চেয়ে মধ্যযুগ অনেক ভালো ছিল। আমরা বর্তমানকে অস্বীকার করি। বর্তমানের বর্বরতাকে ঢাকতে মধ্যযুগের তুলনা দেই। একটা মেয়েকে শিক্ষক নামধারী বদমাশ আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলল। এরপর আর মধ্যযুগীয় বর্বরতা কথাটা চলতে পারে না। বিদায় নুসরাত জাহান রাফি। এই সমাজ তোমাকে বাঁচতে দিল না। মাননীয় সরকার, ওই মাদরাসা বন্ধ করে দিন। এমপিওভুক্তি বাতিল করুন। মাদরাসা নামক এই জল্লাদ খানায় আর বিদ্যাশিক্ষা চলতে পারে না। গড়ে তুলুন নষ্ট সমাজ, নষ্ট মানুষের হাতে বলি হওয়া নুসরাত জাহান রাফির নামে অন্য কোনো বিদ্যাপীঠ, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান। দানব সিরাজ উদদৌলার শাস্তি চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। হত্যার বদলে হত্যা। হত্যাকারীর ক্ষমা নাই।
নুসরাতের মামলার আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু লিখেছেন, ফেনীর কৃতি সন্তান নুসরাত জাহান রাফি আর নেই। ইন্নালিল্লাহ। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আইনজীবী হিসেবে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাব, এই প্রতিজ্ঞা করছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
শওকত ওসমান ভিপি লিখেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। নুসরাতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাপারে কঠিন ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা আশা করি।
সাংবাদিক বখতেয়ার মুন্না লিখেছেন, না ফেরার দেশে চলে গেলো ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত। হায়নাগুলো তোকে বাঁচতে দিলো না। এ সমাজ তোকে বাঁচাতে পারলো না। এ সমাজ কখনও সিরাজ উদ দৌলার মত হায়েনাদের রুখতে পারবে না? আল্লাহ তোকে বেহেস্ত দান করুক।
এদিকে নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে ফেনীর সচেতন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফেনী শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
রাশেদুল হাসান/আরএআর/জেআইএম