আমি লড়বো শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ১০ এপ্রিল ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার হাতে যৌন হয়রানির পর সহপাঠী বান্ধবীদের উদ্দেশে নুসরাত জাহান রাফির লেখা চিঠি মঙ্গলবার তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি কয়েকদিন আগের লেখা বলে ধারণা পুলিশের।

নুসরাত জাহান রাফির পড়ার টেবিলে পাওয়া খাতায় দুই পাতার ওই চিঠি তামান্না ও সাথী নামে দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে। তাতে গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন রাফি। ওই চিঠিতে রাফি আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদ দৌলা গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাফি। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও তার মর্মাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিটিতে নুসরাত লেখেছেন, ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ??? তোরা সিরাজ উদ দৌলা (অভিযুক্ত শিক্ষক) সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস।

তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরও কোন জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিস না। তুই প্রেম করিস না? ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করতে ভালো লাগে? ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেব। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে...। আমি লড়বো শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে যাদের নাম আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।