তীরে এসে তরী ডুবতে বসেছে ইয়াসিনের

মাহাবুর আলম সোহাগ
মাহাবুর আলম সোহাগ মাহাবুর আলম সোহাগ , সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ)
প্রকাশিত: ০৬:৩৭ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৯

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় ২৫ লাখ রুপি খরচ করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ইয়াসিন হাসান। বিশাল অঙ্কের এ টাকা জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলেছেন তিনি। এখন নিয়মিত চেকআপের জন্য যে টাকা প্রয়োজন সেটিই জোগাড় করতে পারছেন না তিনি। এতে করে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ইয়াসিন।

বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ক্যান্সার পরবর্তী চেকআপের জন্য তিনি বর্তমানে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে 'নারায়ণা হেলথ' (এনএইচ)' হাসপাতালে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি সেখান থেকেই জাগো নিউজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইয়াসিন।

Yasin-4

আরও পড়ুন : নিজের চেয়ার ছেড়ে জহিরুলের পাশে এসে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী

তিনি জানান, ২০১৬ সালের জুন মাসে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসা করান রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে। সেখানে প্রায় ১৩ লাখ টাকা খরচ হয় তার। তবে কিছুটা সুস্থও হন তিনি। ৯ মাস পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে আবারও সমস্যা দেখা দেয় তার। পরে বাড়ির সবাই মিলে টাকা জোগাড় করে 'নারায়ণা হেলথ' (এনএইচ) হাসপাতালে পাঠায় তাকে। সেখানে ৫ মাস চিকিৎসা নেয়ার পর ২০১৮ সালের ৯ মে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয় তার। এতে প্রায় ২৫ লাখ রুপি খরচ হয় ইয়াসিনের। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করার পর প্রতি ৩/৪ মাস পর পর তাকে চেকআপ করাতে যেতে হয় 'নারায়ণা হেলথ'তে।

Yasin-4

আরও পড়ুন : ঋণের ২০ হাজার টাকা শেষ, আইসিইউ থেকে ইবি শিক্ষার্থীকে ফেরত

ইয়াসিন বলেন, প্রথমবার তিন মাস এবং ২য় বার ৪ মাস পর চেকআপ করতে হয়। প্রতি চেকআপে ৮ থেকে ১০ দিনের মতো সময় লাগে। চেকআপে সব ধরনের ব্লাড টেস্ট করায়। পরে রিপোর্ট দেখে আবার কবে আসতে হবে তা জানিয়ে দেয়। ২য় বারের টেস্টে একটু বি-ভাইরাস ধরা পড়ে, তাই এবার বেশি টেস্ট করাচ্ছে। ইতোমধ্যে বি-ভাইরাসের ওষুধ শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আমার সবগুলো ওষুধ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। গেলেও দুই থেকে তিন গুন দাম নেয়। তাই তিন থেকে চার মাসের ওষুধ ভারত থেকেই নিয়ে যাই। প্রথমবার প্রায় ৯০ হাজার টাকা লেগেছে। এবার হয়তো আরও বেশি লাগবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও কোনো ওষুধ কিনতে পারিনি। আরও তিন থেকে চার দিন থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে গেলে ১২/১৫ দিন পর পর টেস্ট ও ডাক্তার দেখাতে হয়। তিন থেকে চার মাস পর পর ৮০/৯০ হাজার টাকা আমার বাবার পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে। পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। আত্নীয়রা অনেকভাবে সহায়তা করেছে। তারা আর কত দেবে বলেন?

Yasin-4

আরও পড়ুন : বেরোবি শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী এরশাদের করুণ অবস্থা

ইয়াসিন কামরাঙ্গীর চরের আশ্রাফাবাদ হাসান নগর এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট তিনি।

Yasin

ইয়াসিন বলেন, খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে। প্রায় তিন বছর ধরে প্রতিনিয়ত ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। নানান সমস্যার মাঝেও চিকিৎসা করছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে আমার পেছনে। বাবার ব্যবসার সব পুঁজি শেষ করে ফেলেছি। আমার কারণে পরিবারটা আজ পথে বসেছে। জানি না শেষ পর্যন্ত এ যুদ্ধে টিকে থাকবো কীনা? টিকলেও পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবো কীনা? এসব ভাবনা প্রতিনিয়ত পীড়া দিচ্ছে, তবুও বাঁচার ইচ্ছে করছে। আমাকে কেউ বেঁচে থাকার সুযোগ দেবেন, হৃদয়বানদের প্রতি আকুতির এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন ইয়াসিন।

ইয়াসিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৬৮১-১৫৫০৭৩ নম্বরে।

এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।