পালিয়ে গেলেন শিক্ষিকা
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দারের অপসারণ, গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকালে উপজেলা চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সাংবাদিকরা। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে গেলেন শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। এরই মধ্যে ফেসবুকে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ছবি পোস্ট করে মন্তব্য করেন।
এসব বিষয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার-প্রকাশিত হয়। তার এসব অনিয়মের তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতর।
এরই মধ্যে শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একের পর এক অনিয়ম করেই চলছেন তিনি।
ফলে শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তার অপসারণ চেয়ে রাস্তায় নামেন তারা। প্রতিবাদে মানববন্ধন ডাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবারের মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারী এবং প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
এদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। শৈলকুপা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ডাকুয়া’ পত্রিকার সম্পাদক শামিম বিন সাত্তার বাদী হয়ে রোববার মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শৈলকুপা থানা পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
মামলার বাদী শামিম বিন সাত্তার বলেন, গত বছর শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের দুর্নীতির খবর বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভিতে প্রচার হয়। এরপর তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। স্কুলের নামে পরিচালিত ফেসবুক আইডি থেকে তিন সাংবাদিকের ছবিসহ একটি মানহানিকর পোস্ট দেন।
ওই পোস্টে ঝিনাইদহের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল, ডিবিসির ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আব্দুর রহমান মিল্টন ও আমার ছবি ব্যবহার করেন এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন শিক্ষিকা দিলারা।
শামিম বিন সাত্তার আরও বলেন, এ ঘটনায় সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল ঝিনাইদহ সদর থানায় জিডি করেন। জিডির পর ফেসবুক থেকে আপত্তিকর পোস্টটি সরিয়ে নেন দিলারা ইয়াসমিন। জিডির তদন্ত করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পান শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী। তদন্ত রিপোর্ট জমা হওয়ার পর পুলিশ সদর দফতর থেকে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। গত ২০ মার্চ পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানের পাঠানো চিঠির আলোকে রোববার শৈলকুপা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি করি আমি।
এসব বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কর্মস্থলে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। তিনি কোথায় গেছেন তা জানেন না কেউ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শৈলকুপা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আইয়ুবুর রহমান বলেন, শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। এ অবস্থায় গাঢাকা দিয়েছেন শিক্ষিকা দিলারা। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সাংবাদিকরা। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
এএম/পিআর