‘রাজপাড়ার ছেলেদের জন্যই আমি মারা গিয়েছি’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ৩১ মার্চ ২০১৯

 

কুষ্টিয়ার মিরপুরে বখাটে কয়েক যুবকের নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্ষোভে ঘৃণায় চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য দায়ী করে বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও গত তিন দিনে পুলিশ জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বখাটেদের অত্যাচার সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় মুন্নি (১৫) নামের ওই শিক্ষার্থী। আত্মহত্যা করার আগে একটি চিঠির মাধ্যমে বাবা-মায়ের কাছে শেষবারের মতো ক্ষমা চেয়ে আত্মহত্যার কারণ লিখে যায় মুন্নি।

চিঠিতে মুন্নি লিখেছে, ‘আব্বু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আমি জানিনা কী করে কী হয়ে গেল। আমি তোমার মানসম্মান বাঁচাতে পারলাম না। আর আমি কোনো ইচ্ছা করে করিনি এই কাজ, আমাকে জোর করে করানো হয়েছে। আর জয়নাল এমন কিছু করিনি। তোমরা সবাই মনে করছ ও আমার সাথে কিছু করেছে। কিন্তু ও শুধু আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে। আর তোমার মানসম্মান ডোবালো। রাজপাড়ার মিঠুন, আঙ্গুর এরা তোমার মেয়ের ক্ষতি করল। আমি যদি মরে থাকি তাহলে তুমি মনে করবা রাজ পাড়ার ছেলেদের জন্যই আমি মারা গিয়েছি। আর মা তুমি কষ্ট দিয়ে আমার কষ্ট শেষ করতে পারবে না। ভালো থেকো সবাই। -ইতি তোমার মেয়ে মুন্নি।’

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে সে গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) ময়নাতদন্ত শেষে তাকে দাফন করা হয়। মুন্নি খাতুন মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের হেকমত আলী ভাষার মেয়ে এবং কেবিএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহতের চাচা হাসেম আলী অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার আমার বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে ছিল। এজন্য আমার সেজো ভাইয়ের মেয়ে মুন্নি এবং আমার মেয়ে আমলা বাজারে ফুল কিনতে যায়। এ সময় আমলা বাজার থেকে এলাকার বখাটে জয়নাল প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে আমলা ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে নিয়ে যায়। এ সময় জয়নাল স্থানীয় কয়েক যুবকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আমলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই আশরাফ মুন্নিকে উদ্ধার করে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য রেজেলা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। ইউপি সদস্যের সঙ্গে তার নিজ বাড়ি কাতলামারীতে আসার সময় পথিমধ্যে অটোরিকশার গতিরোধ করে কাতলামারী এলাকার আরোবিয়ার ছেলে জয়নাল, আনছের আলীর ছেলে মিঠুন, রেজন আলীর ছেলে আঙ্গুর, নাসের রাজের ছেলে রাজু এবং আফতার আলীর ছেলে পারভেজ জোর করে মুন্নিকে পার্শ্ববর্তী ছাদিমনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি এসে চিরকুট লিখে গলাই ফাঁস দিয়ে মুন্নী আত্মহত্যা করে।

হাসেম আলীর দাবী, জয়নাল এর আগেও মুন্নিকে নানা সময় উত্ত্যাক্ত করতো। যা অনেকবার বাড়িতেও বলেছে মুন্নি।

এ ব্যপারে মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আব্দুল আলিম জানান, এ ঘটনায় মিরপুর থানায় অপহরণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। দোষীদের আটকের চেষ্টা চলছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

আল-মামুন সাগর/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।