স্বস্তি ফিরে আসছে শাহপরীর দ্বীপে


প্রকাশিত: ১১:৩৮ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০১৫

টানা তিন বছর পর জোয়ার-ভাটার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে যাচ্ছে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপবাসী। দ্বীপে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার পানিসম্পদমন্ত্রী দ্বীপবাসীকে এ খবর জানান। খবর এলাকায় পৌঁছানোর পর দ্বীপবাসীর মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। খুব শিগগিরই একনেক সভায় প্রকল্পটি উত্থাপন করা হবে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দেন।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২২ জুলাই বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া বেড়িবাঁধের একাংশ বিলীন হয়। এটি রোধে কোনে উদ্যোগ না নেয়ায় বাঁধের ভাঙন চরম আকার ধারণ করে। ফলে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটসহ দ্বীপের বিস্তীর্ণ জনপদ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ৪০ হাজার জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবে সাগর ও নদীর পানির কারণে হতভাগা মানুষের আক্ষেপ ছিল আবার কি দ্বীপে বেড়িবাঁধ হবে?

"
ভাঙন আর প্লাবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চরম ভোগান্তিতে বসবাস যেন নিয়মে পরিণত হয় এ বিচিছন্ন জনপদের বাসিন্দাদের। এসব যারা সইতে পারেনি তারা সাগরে দ্বীপটি বিলীনের আশঙ্কায় ইতোমধ্যে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পন্থায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন দ্বীপবাসী। অবশেষে মন্ত্রীর আশ্বাসে তাদের সেই প্রচেষ্টা আশার আলোয় রূপ নিয়েছে।

গত শুক্রবার পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা শাহপরীর দ্বীপের বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

"
এ সময় মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য গৃহিত ২৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেকে) পাশের অপেক্ষায়। এছাড়াও কক্সবাজার বাঁকখালী নদীর জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের জন্য ১০৬ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

মন্ত্রীর এ আশ্বাসের খবরটি শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছার পর ভুক্তভোগীদের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার দেখা দিয়েছে। তবে শিগগিরই স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে দুর্ভোগ ও আতঙ্ক থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দ্বীপবাসী।

"
স্থানীয় সূত্র মতে, টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণে শাহ্পরীর দ্বীপের অবস্থান। এখানে ১৩টি গ্রাম রয়েছে। বর্তমানে ৪০ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস। এ দ্বীপের পশ্চিমে সাগর, পূর্বে নাফনদী, দক্ষিণে বদর মোকাম এলাকা বেড়িবাঁধ দিয়ে রক্ষা করা ছিল। এ বাঁধ অরক্ষিত হয়ে সাগরের পানি লোকালয় গ্রাস করছে। ফলে বসতবাড়ি, চিংড়িঘের, ফসলি জমি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় পুরো দ্বীপ সাগরে বিলীনের আশঙ্কা করা হচেছ।

এদিকে গত তিন বছর ধরে সাগরের রাহু গ্রাসে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ। বর্তমানে মূল-ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দ্বীপবাসীকে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার করতে হচেছ। সাগরের জোয়ারে গত কয়েক বছরে দ্বীপের শত শত বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে যায়। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক ভেঙে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বর্ষায় সাগর পাড়ের মানুষের মাঝে আতঙ্ক লেগে যায়। এমনিতে দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। এ দ্বীপ রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসার আহ্বান এলাকাবাসীর।

"
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মুহাম্মদ হোসেন জানান, ভাঙা বাঁধের কারণে এ দ্বীপের শিক্ষার্থী ও রোগীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রীর ঘোষণায় ভুক্তভোগী সবার মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। তিনি শিগগিরই বাধেঁর প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও শাহপরীর দ্বীপ উত্তর ড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাইল জানান, প্রায় তিন বছর পর শাহপরীর দ্বীপ বাধঁ নির্মাণে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করায় সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। ঘোষণা শুনেই দ্বীপবাসীর মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। তিনি এ প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়ে বাস্তবায়নের জন্য দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।

"
টেকনাফ-উখিয়া আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদি বলেন, পুরো কক্সবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নিয়ে মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। অতি শিগগিরই তা বাস্তবায়নে হাত দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।