আড়াই মাসে নৌকার ভোট কমেছে ৮০ ভাগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫:৩০ পিএম, ২০ মার্চ ২০১৯

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জয়ী হলেও দলীয় কোন্দলে ভোট কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এমনকি সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল মান্নানের কেন্দ্রেও নৌকার পরাজয় হয়েছে। নৌকার ভোট গেল কোথায়? এমন প্রশ্ন সারিয়াকান্দি উপজেলার সচেতন মানুষসহ রাজনীতিবিদদের মুখে মুখে।

৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫০ ভোট পেলেও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ২১ হাজার ২১১ ভোট। মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে নৌকার ভোট কমে গেছে। শুধু তাই নয় স্বয়ং এমপি আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান যে কেন্দ্রের ভোটার সেই কেন্দ্রে নৌকার ভোট কমেছে কয়েকগুণ। ওই কেন্দ্রে বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী নৌকার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। আর এ কারণেই নানা প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।

উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবীদ মুনজিল আলী সরকার শেষ পর্যন্ত ভোটে জয়ী হলেও মানুষের প্রশ্ন নৌকার এত ভোট গেল কোথায়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রার্থী হওয়ায় বেশি ভোটে বিজয়ী হবেন বলে অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু ভোটের ফলাফল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হতাশ করেছে।

উপজেলার হিন্দুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন করেন এমপি আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান। ওই কেন্দ্রে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আব্দুল মান্নান পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৬৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন মাত্র ১৬ ভোট। সেখানকার মোট ভোটার ৩ হাজার ৯৩২টি।

এবার উপজেলা নির্বাচনে সেই একই কেন্দ্রে ২ মাস ১৭ দিন পর নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ মুনজিল আলী সরকার পেয়েছেন ২০৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত টিপু সুলতান হেলিকপ্টার প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৮৭ ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুস সালাম ৭৯ ও শাজাহান আলী পেয়েছেন ৫৭ ভোট। মোট ১ হাজার ২৬০ জন ভোট দিয়েছেন।

এদিকে নৌকার বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এমপিপত্নী সাহাদারা মান্নান প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে আগেই অভিযোগ করে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন নৌকার প্রার্থী বিজয়ী চেয়ারম্যান মুনজিল আলী সরকার। ১৫ মার্চ বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, সাারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় এমপি পত্নী সাহাদারা মান্নান স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে নৌকা মার্কার কর্মীদেরকে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে। দলীয় সকল স্তরের নেতাকর্মীকে এমপির ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে নৌকা মার্কার বিপক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছে। কেউ তাদের কথা মানতে না চাইলে তাদেরকে প্রশাসনিক ভীতি ও দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছে। এতে দলের কর্মীরা ভিত ও বিব্রত বোধ করছে এবং নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার সাহস-মনোবল হারিয়ে ফেলছে ।

সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বগুড়া প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান বলেছিলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এতে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কৃতি রাজনীতিবীদ আব্দুল মান্নান এমপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান বলেন, এবার ভোটারদের মাঝে উৎসাহ কম ছিল। এ জন্য ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল না। আর কেন্দ্রে ভোটার টানার জন্য প্রার্থীকে কাজ করতে হয়। হয়তো সেই কাজটিও ঠিকমতো হয়নি।

লিমন বাসার/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।