নৌকার বিরুদ্ধে গেলেই বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ দলীয় বেশ কিছু নেতাকে নৌকার পক্ষে আনতে না পেরে পদ থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় তাদের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
তবে লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর ও কমলনগরের প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, তারাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলের মনোনীত প্রার্থীদের তেমন জনসমর্থন নেই। নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভোট হলে তারা বিপুল ভোটে হারবে। নিজেদের পক্ষে নেতাকর্মীদের আনতে না পেরে নির্বাচন করার কারণে অনেককে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর সদরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর (দোয়াত কলম) নির্বাচন করায় ১৬ মার্চ আওয়ামী লীগের চার নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। টিপু উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সদরের উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী (নৌকা)।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা হলেন- সদর উপজেলা লাহারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন, শাকচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকবুল হোসেন সেলিম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড সহ-সভাপতি বজলু হক বেপারী।
এদিকে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের (মোটর সাইকেল) পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়ায় ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন তাদের বহিষ্কার করেন। মামুনুর রশিদকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন উপজেলার চর মোহনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সদস্য আবদুল হক, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ পঞ্চায়েত, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি বশির উল্যা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মোস্তফা কামাল বাহাদুর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেলু।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ মার্চ রায়পুরে তাজমহল সিনেমা হলের সামনে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা করা হয়। এতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তিনি উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলেন। সেখানে ওসমান খানকে আহ্বায়ক, আলাউদ্দিন হাওলাদার, রুহুল আমিন খলিফা, খালেদ হোসেন দেওয়ান ও আবদুল লতিফ দেওয়ানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, জেলার রামগতিতে আবদুল ওয়াহেদ ও কমলনগরে এ কে এম নুরুল আমিনকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়। ওই দুই উপজেলাতেই দলের বিদ্রোহী শক্ত একাধিক প্রার্থী রয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্তদ্র প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, তাদের পক্ষে কাজ করায় নেতাদের ভয়ভীতি প্রর্দশন ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিষয়গুলো প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।
সদরের চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, আমরা পক্ষে মাঠে ভোটের জোয়ার উঠেছে। আওয়ামী লীগের আবুল কাশেম বিগত দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পেটানোসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় জনগণ তাকে বর্জন করছে। আমার জনপ্রিয়তা দেখে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি, বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্ত করার হুমকি দিচ্ছে।
রায়পুরের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, আমার নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার অনুসারী হুমকি দিচ্ছে। এসব করে লাভ হবে না। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবে। আমি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, যারা নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করছে, তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল। গঠণতন্ত্র অনুযায়ী এখন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দলীয় নেতাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরে তৃতীয় দফায় ২৪ মার্চ উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
কাজল কায়েস/এএম/জেআইএম